নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা মালদহ: দিনেদুপুরে পিছু ধাওয়া চার দুষ্কৃতী। সঙ্গে মোটরবাইক। হাতে উঁচিয়ে ধরা ওয়ান শটার এবং পিস্তল। প্রাণ বাঁচাতে একটি দোকানে ঢুকেও শেষরক্ষা হল না। পিছু ধাওয়া করে সেখানে পৌঁছে গেল দুই দুষ্কৃতী। তারপর মাথা লক্ষ্য করে গুলি। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির খুব কাছেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন মালদহের দাপুটে তৃণমূল নেতা দুলাল (বাবলা) সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী তিনি। ইংলিশবাজার পুরসভার টানা ৩০ বছরের কাউন্সিলার তথা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতিও। ৬২ বছর বয়সি এই নেতাকে খুনের ঘটনায় শুধু মালদহ নয়, রাজ্যজুড়ে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে। এক্স হ্যান্ডেলে পুলিসকে দুষেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। পরে নবান্নে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের মঞ্চ থেকে কড়া ভাষায় বলেন, ‘বাবলার সিকিউরিটি তুলে নেওয়া হয়েছিল। পুলিস সুপারের অপদার্থতার কারণেই খুন হতে হয়েছে আমার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাকে।’ বৈঠক থেকেই রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ফিরহাদ হাকিম এবং সাবিনা ইয়াসমিনকে মালদহে পাঠিয়ে দেন মমতা। বাবলাবাবুর মহানন্দাপাড়ার আদি বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী চৈতালি সরকারকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন দুই মন্ত্রী। প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলেছেন, ‘পুলিস তদন্ত করে অপরাধী ধরবে। রং না দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর এহেন কড়া প্রতিক্রিয়ায় নড়েচড়ে বসে পুলিস। সন্ধ্যার মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় তৃণমূল নেতা খুনে অভিযুক্ত দুই ‘সুপারি কিলার’কে। মানিকচকের ভূতনির চণ্ডীপুর ঘাটের কাছে নাকা চেকিংয়ের সময় পুলিস তাদের পাকড়াও করে। গঙ্গা পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে পালানোর মতলব ছিল দু’জনের। বাগবাড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনের সময় ব্যবহৃত নম্বরপ্লেট বিহীন মোটরবাইকও। পুলিস জানিয়েছে, একটি ঝোপের মধ্যে সেটি ফেলে রেখে ঘাটের দিকে যাচ্ছিল দুই দুষ্কৃতী। তাদের একজন বিহারের এবং অপরজন ইংলিশবাজারের বাসিন্দা। যদিও নাম পরিচয় জানানো হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বাবলা সরকারকে খুনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার ‘সুপারি’ দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় জড়িত বাকি দুই দুষ্কৃতীর খোঁজ চলছে।
এর আগেও একবার খুনের চেষ্টা হয়েছিল বাবলাবাবুকে। তারপর থেকে আদি বাড়ি ছাড়াও ইংলিশবাজারে নিজের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে থাকতে শুরু করেছিলেন। পুলিস জানিয়েছে, এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ইংলিশবাজারের সুভাষপল্লির ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পাইপ লাইন এলাকায় নিজের প্লাইউড কারখানায় যান বাবলাবাবু। গাড়ি থেকে নামামাত্রই তাঁকে ঘিরে ধরে মুখ ঢেকে বাইকে চেপে আসা চার দুষ্কৃতী। বিপদ বুঝে দৌড়ে উল্টোদিকের একটি দোকানের ভিতর ঢুকতে যান তিনি। দোকানের সিসি ক্যামেরার ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান। সেখানে ঢুকেই গুলি চালায় এক দুষ্কৃতী। লুটিয়ে পড়েন বাবলাবাবু। এরপর তাঁর মাথায় গুলি করে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়েই পালিয়ে যায় দু’জনে। অপারেশন চলাকালীন বাইরে পিস্তল হাতে পাহারায় ছিল এক দুষ্কৃতী। বাইক চালু অবস্থায় রেখে অপেক্ষা করছিল আরও একজন।