• স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য দানের জমিতে কী ভাবে জলপ্রকল্প? কোর্টের প্রশ্নে রাজ্যে
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্প্রসারণের জন্য দানে প্রাপ্ত জমিতে জলপ্রকল্প গড়ে হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে সেই জল প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ফের এই মামলার শুনানি।

    রায়দিঘির কালীনগর এলাকার পুরন্দরপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেড সংখ্যা বাড়াতে রাজ্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে পাঁচ দশক আগে তিন একরের মতো জমি দান করেছিল এলাকার একটি পরিবার। কিন্তু এত বছরে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেড সংখ্যা ৬ থেকে ১০–এও পৌঁছয়নি। উল্টে সেই জমিতে শুরু হয়েছে জলপ্রকল্প। যা নিয়ে আপত্তি তুলে সংশ্লিষ্ট পরিবার মামলা করে হাইকোর্টে।

    এ দিন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, রাজ্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৯৭৬ সালে জমিদান করলেন মালিক। অথচ সেই জমিতে জল প্রকল্প তৈরি হচ্ছে কী ভাবে? রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত।

    মামলাকারী তথা স্থানীয় বাসিন্দা জ়াকির হোসেন মোল্লা আদালতে জানিয়েছেন, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকারকে আড়াই একর জমি দিয়েছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। সেখানে ১৯৬৪–তে তৈরি হয় ছ’শয্যার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আরও অন্তত চারটি বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তাই ১৯৭৬–এ হাসপাতালের গা–লাগোয়া জমি থেকে সরকারকে আরও প্রায় তিন একর দেন জ়াকিরের বাবা।

    কিন্তু অভিযোগ, এত দিনে সেই সম্প্রসারণের কাজ তো হয়েইনি, উল্টে শুরু হয়েছে জল প্রকল্প। জ়াকিরের আইনজীবী পঙ্কজ হালদারের দাবি, ‘জমি–দানের নথিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উল্লেখ রয়েছে। এখন জল–প্রকল্পে রাজনৈতিক স্বার্থে কিছু দলীয় লোককে কাজ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’

    নথি খতিয়ে দেখে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘১৯৭৬–এ ১০ শয্যার হাসপাতালের পরিকল্পনা করেছিল সরকার। কিন্তু এখন তা ১০০ শয্যার হওয়া উচিত। নইলে জনস্বার্থে যে পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা রক্ষিত হবে না।’ প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, ‘হাসপাতালের বেড সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মালিকের কাছে আরও জমি চাওয়া হয়েছিল। তিনিও সে কারণেই জমি দিয়েছিলেন। ফলে এখন সেখানে অন্য কাজ করা যাবে না।’

    বিস্মিত ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘১৯৭৬–এ রাজ্যই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেড বাড়ানোর পরিকল্পনা করল, সেই অনুযায়ী জমিও নিল। কিন্তু এত দিনেও তা কার্যকর হলো না কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা নেই!’ এ দিন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দেওয়া রিপোর্টে শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর কোনও উল্লেখ না–থাকায় আরও বিরক্ত হাইকোর্ট।

  • Link to this news (এই সময়)