• টার্গেট, কিল অ্যান্ড বার্ন, মালদায় বাড়ছে ঠান্ডা মাথার অপরাধ
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    লুট, অপহরণ, আমবাগানে মহিলাকে খুন করে পুড়িয়ে মারার ঘটনার পরে এ বার প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের ঘটনা মালদায়। জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক সোনার দোকানে লুট, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই জেলা পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ছিলেন ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তারা।

    দু’বার নবান্নে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তারা। পুলিশি তদন্ত, অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে গড়িমসি নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল ওই চিঠিতে। বৃহস্পতিবার ইংরেজবাজারের জনপ্রিয় তৃণমূল কাউন্সিলার খুনের পরে সব মিলিয়ে ফের কাঠগড়ায় জেলা পুলিশ।

    মালদায় গত দেড় বছরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে রীতিমতো আতঙ্কিত ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ। জেলা পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বড়দিনের রাতে চাঁচলে সোনার দোকানে দুঃসাহসির ডাকাতির ঘটনায় লুটের গয়নার সিংহভাগ আজও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গত বছরই হরিশ্চন্দ্রপুরে সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি মদের দোকানে বন্দুক দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা ১০ লক্ষ টাকা লুট করে।

    মারধর করা হয় দোকানের মালিক ও কর্মচারীকে। ৩১ জানুয়ারি রাতে ইংরেজবাজার শহরের একটি মার্কেটের পরিত্যক্ত ঘরে পঞ্চম শ্রেণির এক নাবালিকা ছাত্রীর কাটা মুণ্ড উদ্ধার হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি মোথাবাড়ি থানা এলাকায় ১১ বছরের এক নাবালিকাকে সরস্বতী পুজোর পরের দিন ভুট্টা খেতে ধর্ষণ করে এক দুষ্কৃতী। ওই বছরই পুরাতন মালদা থানার নলডুবি এলাকার ১৩ বছরের আদিবাসী নাবালিকাকে ইটভাটায় ধর্ষণের পরে খুন করা হয়।

    খুন তো ছিলই, এর পর হঠাৎ করে জেলায় শুরু হয় ‘কিল অ্যান্ড বার্ন’। দেড় বছর আগে ইংরেজবাজার থানার কোতোয়ালি এলাকায় আমবাগান থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কয়েক দিন আগে চাঁচল থানার মালতীপুর আমবাগানে অগ্নিদগ্ধ এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। মালদায় এই ধরনের অপরাধ কী ভাবে বাড়ছে‌ তা নিয়ে উদ্বিগ্ন‌ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। মালদা মহিলা জাগরণ মঞ্চের সদস্যা তুলিকা ঘোষ বলেন, ‘মালদায় পর পর এমন ঘটনায় সত্যিই উদ্বেগ বেড়েছে। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করলেও অপরাধ দমনে পুলিশকে আরও কড়া হতে হবে।’

    ইংরেজবাজার শহরে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বাবলাকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করার ঘটনার পর টনক নড়ে গিয়েছে জেলার স্বর্ণশিল্পী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহলে। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল সরকার বলেন, ‘চাঁচলে সোনার দোকানের ডাকাতির ঘটনায় লুট করা ৮ কোটির অলঙ্কার আজও সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। শুধু তাই নয়, গত এক বছরে মালদায় দশ জন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকানে চুরি এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।’ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উত্তম বসাক বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই ব্যবসায়ীদের দোকানে চুরি, লুট হচ্ছে।’

    পুলিশ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে স্বর্ণকারদের শোরুমে সাইরেন যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। একশোর বেশি স্বর্ণব্যবসায়ী পুলিশের কথায় গুরুত্ব দেননি। তাঁদের বক্তব্য, ‘এ সব বসিয়ে কী হবে? অপরাধ দমনে পুলিশকে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। সোর্স ঠিক করতে হবে। তবেই যদি কিছু হয়।’ যদিও এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • Link to this news (এই সময়)