• জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ধূপগুড়ির বাসিন্দারা
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • রনি চৌধুরী, ধূপগুড়ি

    ছিল জলাভূমি। রাতারাতি ভরাট করে তার উপরে তৈরি হয়ে গেল দোকান কিংবা বাড়ি। বিকেলেও এলাকার লোকজন দেখেছিলেন, ডোবায় টলটল করছে জল। পরের দিন সকালে দেখা গেল, সেই ডোবার অর্ধেক ভরাট হয়ে গিয়েছে। ধূপগুড়ির বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনটা চলতে থাকলে এলাকায় আর কোনও জলাভূমিই থাকবে না।

    প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ‍বন্দোপাধ্যায় একাধিক বার বলেছেন, ‘কোনও ভাবে সরকারি জমি দখল বা জলাজমি ভরাট করা যাবে না।’ এমনটা হয়ে থাকলে তা দখলমুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। অথচ, বাস্তবে সেই নির্দেশের কোনও সুফল চোখে পড়ছে না ধূপগুড়ির লোকজনের।

    তাঁদের প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর এমন নির্দেশের পরেও মাটি মাফিয়ারা কোন সাহসে দিনের পর দিন এ সব করতে পারছে? দলনেত্রীর নির্দেশ কি তবে নিচুতলার নেতা বা পুলিশ-প্রশাসনের কানে পৌঁছচ্ছে না?

    অভিযোগ, মাটি মাফিয়াদের কাজকর্ম সম্পর্কে সব জানে পুলিশ–প্রশাসনের লোকজন। তাঁদের চোখের সামনেই দখল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সরকারি জায়গা ও জলাভূমি। অথচ কোনও অজ্ঞাত কারণে তাঁরা দেখেও দেখেন না। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, ধূপগুড়ি ব্লকের দেওয়ামালি এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে রাতারাতি সেখানে তৈরি হয়ে যাচ্ছে বাড়ি, দোকান। ‍

    বিজেপির ধূপগুড়ি বিধানসভার আহ্বায়ক চন্দন দত্ত বলছেন, ‘ধূপগুড়িতে বেনিয়মটাই যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদের সরকারি জায়গা দখল করে এর আগেও বারোঘড়িয়ায় তৃণমূলের পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে। এ সব দেখে উৎসাহিত হচ্ছে জমি মাফিয়ারাও।’

    পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস-এর অন্যতম কর্মকর্তা নফসর আলির কথায় ‘ধূপগুড়িতে যে ভাবে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে তাতে বাস্তুতন্ত্রের উপরে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বহু পাখি, জলজ প্রাণী হারিয়ে যেতে বসেছে। পুলিশ–প্রশাসনের চোখের সামনে কী ভাবে জমিগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।’ তাঁর সংযোজন, ‘এর আগেও ধূপগুড়িতে নদীর চর দখল করে রেস্তরাঁ তৈরি হয়েছে। এখনও তা দখলমুক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। এলাকার সমস্ত জলাভূমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।’

    বিরোধীদের অভিযোগ, মাটি মাফিয়াদের মদত দিচ্ছে ভূমি সংস্কার দপ্তরের নিচু তলার আধিকারিক ও পুলিশের একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, চোখের সামনে সব দেখেও চুপ করে থাকতে হয়। জমি মাফিয়াদের দাপট এতটাই যে, প্রকাশ্যে মুখ খুললেও বিপদ বাড়বে। ধূপগুড়ির ২ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন জলপাইগুড়িগামী রাস্তার পাশে পূর্ত দপ্তরের জায়গাও দখল করেছে দুষ্কৃতীরা। রাতের অন্ধকারে ট্রাকে করে শহরের আবর্জনা নিয়ে এসেও জলাভূমি ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা তপন রায় বলেন, ‘রাতে কেউ বা কারা ডোবাটিতে বালি বা মাটি ফেলেছে। সকালে উঠে দেখি, অনেকটাই ভরাট হয়ে গিয়েছে।’

    তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক অরুপ দে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ, সরকারি জমি বা জলাভূমি দখল করা যাবে না। কেউ যদি তা করে থাকে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে। এমনকী, দলের কেউ যদি এর নেপথ্যে থাকে তার বিরুদ্ধেও দল ব্যবস্থা নেবে।’

    ধূপগুড়ির ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক জয়দীপ ঘোষ রায় অবশ্য বিষয়টিই জানেন না। তাঁর আশ্বাস, ‘খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রয়োজনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।’

  • Link to this news (এই সময়)