• ‘বিষাক্ত’ আদিগঙ্গার ঘাট, তবু সংস্কারে প্রশ্ন
    এই সময় | ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • দূষণের গ্রাসে আদিগঙ্গা! সেখানে স্নান করা তো দূরের কথা, জলে পা ডোবাতেও সঙ্কোচ বোধ করেন স্থানীয়রা। সেখানেই কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঘাট সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, আদিগঙ্গায় যদি মানুষ নামতেই না পারেন তাহলে ঘাট সংস্কার করে আখেরে কার লাভ হবে?

    কলকাতা পুরসভার রেকর্ড বলছে, একটা সময়ে কালীঘাট মন্দিরের পাশ দিয়েই বইত আদিগঙ্গা। গঙ্গার মতোই আদিগঙ্গার জলকে ‘পবিত্র’ মনে করা হতো। আদিগঙ্গার জল দিয়েই মন্দিরে পুজো হতো। কালীঘাট মন্দির চত্বরেই রয়েছে পবিত্র কুণ্ড পুকুর। আদিগঙ্গার জল সরাসরি সেখানে প্রবেশ করত।

    রানি রাসমণি মাঝে মধ্যেই কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। তার আগে তিনি আদিগঙ্গায় স্নান করে শুদ্ধ হতেন। রানি রাসমণি কালীঘাট মন্দিরের অদূরে একটা ঘাট বানিয়েছিলেন, যা ‘রানি রাসমণি ঘাট’ নামে পরিচিত। কালীঘাট মন্দিরের আশপাশে আদিগঙ্গার ধারে এ রকম অনেক ঘাট রয়েছে যেখানে এক সময়ে পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু আদিগঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া কেউ আর সেই সব ঘাটে যান না। সংস্কারের অভাবে ঘাটগুলোর এখন জরাজীর্ণ অবস্থা।

    ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত সেই সব ঘাটকে নতুন করে সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তারই অঙ্গ হিসাবে সম্প্রতি ৮৩ নম্বর রাখাল দাস আড্ডি রোড, ৬৯ নম্বর চেতলা রোড এবং ১৯ নম্বর চেতলা রোডে তিনটি ঘাট সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট বিভাগ। যদিও অনেকের আশঙ্কা, আদিগঙ্গার জলে দূষণের মাত্রা কমাতে না পারলে শুধুমাত্র ঘাট সংস্কার করে লাভ হবে না। নিয়মিত ব্যবহার না হলে ঘাটগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হবে। সেই সঙ্গে সরকারি টাকার অপচয় হবে।

    পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘আদিগঙ্গার জল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে আমি দেখেছি, এর অবস্থা নর্দমা‍র থেকেও খারাপ। মোট ১১২টি আউটফল থেকে নর্দমার দূষিত জল সরাসরি আদিগঙ্গায় পড়ে। এটা নিয়ে আমি জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলাম। তারই জেরে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা প্রকল্পে আদিগঙ্গা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু কোন কাজটা আগে করা উচিত, সেটা সরকারকে ঠিক করতে হবে। আদিগঙ্গার জলে দূষণ না কমলে ঘাট সংস্কার করে করে কোনও লাভ হবে না।’

    কালীঘাট মন্দির কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কল্যাণ হালদার বলেন, ‘অতীতে আদিগঙ্গার জল দিয়ে মায়ের মন্দিরে পুজো হতো বলে আমি শুনেছি। পাইপের মাধ্যমে আদিগঙ্গার জল এসে মিশত কুণ্ড পুকুরে। এখন আর আগের মতো আদিগঙ্গার জল কুণ্ড পুকুরে ঢোকে না। সাব মার্সিবল পাম্প থেকে কুণ্ড পুকুরে জলের জোগান দেওয়া হয়। আদিগঙ্গার ঘাট সংস্কার করে কী লাভ হবে আমরাও বুঝতে পারছি না।’

    কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘ছোটবেলায় আমি নিজে আদিগঙ্গা সাঁতরে পার হতাম। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও আদিগঙ্গায় সাঁতার কাটতেন বলে শুনেছি, কিন্তু এখন যা অবস্থা ওখানে নামতে সত্যিই ভয় করে। সেই জন্যই আমরা আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবনের কাজ শুরু করেছি। জলে দূষণ কমানোর পাশাপাশি ঘাটগুলোকেও সংস্কার করা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)