কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের পরামর্শে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, শিলিগুড়ির মহানন্দা অভয়ারণ্য থেকে আকাশপথে (এরিয়াল ডিসট্যান্স) পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আর বহুতল নির্মাণ করা যাবে না। নষ্ট করা যাবে না শিলিগুড়ির এই হিমালয়ান ল্যান্ডস্কেপ। উত্তরবঙ্গে বনাঞ্চলের শেষ নেই। জলপাইগুড়িতে গরুমারা, আলিপুরদুয়ারে বক্সা, জলদাপাড়া— অরণ্য আর অরণ্য।
আকাশপথে অন্যত্র এই দূরত্ব রয়েছে এক থেকে দুই কিলোমিটার। কিন্তু মহানন্দা অভয়ারণ্যের ক্ষেত্রে পাঁচ কিলোমিটারের এই নির্দেশিকায় মাথায় হাত পড়েছে অনেকেরই। উদ্বিগ্ন প্রোমোটরেরাও। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাও। ক্রমশ জনসংখ্যা বাড়ছে শহরে। এত মানুষের ঠাঁই গড়তে হলে বহুতল ছাড়া উপায় নেই। আকাশপথে পাঁচ কিলোমিটার মাপকাঠি ধরতে হলে চম্পাসারি এলাকার সমস্ত বাড়িঘর ভেঙে দিতে হবে।
ফলে ‘সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না’, এমন একটি অবস্থান নিতে চাইছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। আজ, শুক্রবার শিলিগুড়ি পুরসভায় এ ব্যাপারে একটি জরুরি সভার ডাক দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল। ওই বৈঠকে দার্জিলিং জেলার সমস্ত ডিএফও, শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন এবং পরিবেশপ্রেমী সংস্থাগুলিকে ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে এই ব্যাপারে আলোচনা হবে এবং এরিয়াল ডিসট্যান্স কমানো উচিত কি না সেই ব্যাপারে আলোচনা হবে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশপ্রেমী মহলে সোরগোল পড়ে গিয়েছে। অনেকেই চান না, এরিয়াল ডিসট্যান্স কমানো হোক।
তাঁদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই হিমালয়ান ল্যান্ডস্কেপের যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়েছে। গুলমায় বনাঞ্চলের জমিতে তৈরি হয়েছে একের পর এক রেস্তরাঁ এবং হোমস্টে। পাথারঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কার অনুমতিতে একের পর এক বহুতল তৈরি হলো সেটা প্রশাসনের কাছেও স্পষ্ট নয়। একই অভিযোগ শালবাড়ি এলাকাতেও।
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, 'প্রথমেই ভুল করা হয়েছে। অন্যত্র যখন এক থেকে দুই কিলোমিটার এরিয়াল ডিসট্যান্সকে মাপকাঠি ধরা হয়েছে তখন এখানে কেন পাঁচ কিলোমিটার ধরা হলো? যাই হোক, সকলে মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে পরিবেশের উপরে প্রভাব না-পড়ে।'
ক্রেডাইয়ের শিলিগুড়ির অন্যতম কর্তা দীপক রসরাজ বলেন, ‘পাঁচ কিলোমিটার এরিয়াল ডিসট্যান্সকে মাপকাঠি ধরলে লোকে তো বাড়িঘরই তৈরি করতে পারবে না। অনেকেই জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পরে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’