ফিরে এসে নিজের রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। জলপাইগুড়ি শহরের গোমস্তাপাড়ার বাসিন্দা প্রীতম। ৩৩ বছরের এই বিজ্ঞানীর কথায়, ‘এত দিন বইয়ের পাতাতে মেরুজ্যোতি, পেঙ্গুইন, শিল এই সমস্ত পড়েছি। এবার তা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করলাম।’
আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য ভারত সরকার ইস্ট আন্টার্টিকায় ভারতী ইন্ডিয়া সায়েন্টিফিক স্টেশন স্থাপন করেছে। ২০১২ সালে এই স্টেশন চালু হয়। যদিও দক্ষিণ মেরুতে মৈত্রী নামক আরও একটি সেন্টার রয়েছে ভারত সরকারের। প্রতিবছর আবহাওয়া, মহাকাশ সহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের পাঠানো হয় এই স্টেশনগুলিতে।
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সায়েন্টিফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত প্রীতম বললেন, ‘দক্ষিণ মেরুতে ৪৩ তম ইন্ডিয়ান সায়েন্টিফিক এক্সপিডিশন টু আন্টার্টিকা গবেষণার জন্য আমাকে নির্বাচন করে ভারত সরকার।’ আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি ২২ জনের ভারতীয় গ্রুপে ছিলেন মহাকাশ বিজ্ঞানী ও ভূতত্ববীদেরাও। সেখানে তিনি সঙ্গী হিসাবে পেয়েছিলেন মেঘালয়ের এক আবহাওয়া বিজ্ঞানীকে।
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তাঁরা রওনা হন। তবে তার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল শারীরিক পরীক্ষা। তাছাড়াও দক্ষিণ মেরুর ওই প্রতিকুল আবহাওয়ায় কীভাবে টিকে থাকতে হবে, অসুবিধা কী কী হতে পারে, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ৭-১০ দিনের একটি প্রশিক্ষন দেওয়া হয় তাঁদের। তারপর সবাই মিলে যান গোয়ায়। সেখান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন। তারসর বিমানে পৌঁছান দক্ষিণ মেরুতে।
প্রীতম বললেন, ‘বিমান থেকে নামার পরে সারা শরীরে যেন কামর বসাচ্ছিল ঠান্ডা হাওয়া। পরে জানতে পারি, তাপমাত্রা তখন -২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে, সে সময় ২২-২৩ ঘন্টার দিন। সূর্যের আলো বরফে প্রতিফলিত হয়ে যেন ঠিকরে আসছে চোখে। অবশেষে সানগ্লাসের সাহায্য নিতে হয়।’ বিমান থেকে পিস্টনবুলি গাড়ির মাধ্যমে রিসার্চ স্টেশনে পৌঁছান তিনি। তারপরই সকলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
জলপাইগুড়ি ফনীন্দ্রদেব বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রীতম জানায়, ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে হয় এই গবেষণায়। ভারতে এই সেন্টারের পাশেই রয়েছে রাশিয়া এবং চিনের রিসার্চ সেন্টার। এই ৪০০ দিনের বাকি দু্’দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ভালই সখ্য গড়ে ওঠে তরুণ বিজ্ঞানী। তাঁদের সঙ্গে ইন্ডোর গেম ছাড়াও ভলিবল, ফুটবল খেলার এই দিনগুলি সারা জীবন মনে থেকে যাবে বলে জানালেন তিনি।