বর্তমান রাজ্য সরকার তাঁতশিল্পকে বিশেষত গঙ্গারামপুর এলাকার তাঁতশিল্পীদের সুবিধার্থে তন্তুজ-র পক্ষ থেকে একটি অফিস নির্মাণ করে যেখান থেকে সুলভ মূল্যে স্থানীয় তাঁতিদের সুতো সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। উৎপাদিত কাপড়ের বিক্রির জন্য তন্তুজ-র এই কাউন্টারকেই ব্যবহার করা হবে, এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু অভিযোগ, কাউন্টার তৈরির পরে দীর্ঘ সময় পেরিয়েছে। যে লক্ষে এই কাউন্টার তৈরি করা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়নি। কোনো রকম হাল ফেরেনি স্থানীয় তাঁতশিল্পীদের। তন্তুজ-র এই অফিস থেকে সুতো দিয়ে ডিজাইন দিয়ে স্থানীয় তাঁতশিল্পীদের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় শাড়ির বরাত দেয় এই সংস্থা। কিন্তু তা বছরে মাত্র তিন মাস। বাকি সময় অন্য কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয় শিল্পীদের।
এক সময় গঙ্গারামপুর ও তপন ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাঁত একটি কুটির শিল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। স্থানীয় প্রায় কয়েক হাজার পরিবার এই তাঁতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা কমতে কমতে গিয়ে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, গঙ্গারামপুরে তাঁতের অস্তিত্ব প্রায় হারাতে বসেছে। একসময় গঙ্গারামপুর শহরের এক নম্বর দুই নম্বর তিন ও চার নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সারাদিন তাদের খটা খট শব্দে মাতোয়ারা থাকত।
এখন সেসব অতীত। অধিকাংশ বাড়িতেই তাঁত বন্ধ হয়েছে। শিল্পীরা কেউ ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে, কেউ-বা টোটো চালাতে শুরু করেছেন। কারণ সারা বছরে মাত্র তিন মাস তাঁতের কাজের বরাত পান তাঁরা। বাকি সময় তাঁদের অন্য কাজে ভরসা করতে হয়, যে কারণে তাঁতশিল্পের থেকে মুখ ঘুরিয়েছে নতুন প্রজন্ম। রুটিরুজির টানে অনেকেই বন্ধ করে দিচ্ছেন তাঁদের কারখানা। বাংলাদেশি কাপড় এবং মিলে তৈরি কাপড় দ্রুত বাজার দখল করেছে। সরকারি প্রকল্প একের পর এক ঘোষণা হয়েছে। প্রচুর টাকাও এসেছে কিন্তু শিল্পীদের ভাগ্যে জুটেছে অল্পই।
সরকারি প্রকল্পে ঘোষণা করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কিন্তু তা প্রকৃত শিল্পীদের কাছে কোনদিনই পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। স্থানীয়দের দাবি, সারা বছর যদি তাঁদের এরকম ভাবে কাজের বরাত দেওয়া হয়, তাহলে অন্ততপক্ষে শিল্পটা বেঁচে থাকে! একটা তাঁত বুনে তাঁরা ৩৫০ থেকে ৩৯০ টাকা পান, যন্ত্রচালিত মেশিনে সারা দিনে দুটি কাপড় বোনা সম্ভব। অর্থাৎ, গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার হতে পারে। কিন্তু তা সারা বছর চলে না। যে কারণে এক সময়কার নামকরা কুটিরশিল্প এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত!