সংবাদদাতা, কাটোয়া: কেতুগ্রামের মাস্টার ডিগ্রির পড়ুয়া দিয়া সুলতানা সবলা মেলার স্টলে বসে বিক্রির অবসরে বই পড়ছেন। তাঁর তৈরি গয়না ভিন রাজ্যে পাড়িও দিচ্ছে। কেতুগ্রাম-১ ব্লকের খাঁজি গ্রামের বাসিন্দা মহন্মদ বদরুদ্দোজা শেখ ও সোনি সুলতানার একমাত্র মেয়ে দিয়া সুলতানা। বদরুদ্দোজা সাহেব দীর্ঘদিন ধরেই শয্যাশায়ী। একসময়ে কলকাতায় চাকরি করতেন। কিন্তু মেয়ে জন্মানোর এক বছরের মাথাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সংসারে হাল ধরতে স্ত্রী সোনি সুলতানা সেলাইয়ের কাজ নেন। একমাত্র মেয়েকে ওই কাজ করেই পড়াশোনা শিখিয়েছেন। মেয়ে দিয়া উচ্চমাধ্যমিক পড়ার পরেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে নাম লেখান। শিল্পীর পরিচয়পত্রও পেয়েছেন। কন্যাশ্রী স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে ঋণ নিয়ে হাতের কাজ শুরু করেন। কারণ পড়াশোনা করে ভালো চাকরি পেতে হবে। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাপড়ের তৈরি গয়না তৈরি করতে থাকেন। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সরকারি মেলায় স্টল দেন দিয়া। বর্তমানে তিনি বোলপুরে ভূগোল নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি করছেন।
কাটোয়ায় আয়োজিত কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের মাঠে সবলা মেলাতেও দিয়া স্টল দিয়েছেন। হাতে সময় নেই, তাই মেলার ফাঁকেই স্টলেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টল থেকেই তিনি টিউশন পড়তে যাচ্ছ।ন৷ দিয়া বলেন, আমি শিক্ষিকা হতে চাই। পড়াশোনা না করলে স্বপ্নপূরণ হবে না। বাবার চিকিৎসার খরচ, সংসার চালানোর খরচ জোগাবে কে। মা তো সাহায্যে করছেন। কিন্তু তাঁর তো বয়স হচ্ছে। তাই আমিও মেলায় মেলায় ঘুরে স্টল দিই। পড়াশোনার ফাঁকে হাতের কাজও করি।
দিয়ার হাতের তৈরি গয়না এখন বেঙ্গালুরু, দিল্লি, রাজস্থানের জয়পুর, জব্বলপুরে পাড়ি দিচ্ছে। ক্রেতারাও তাঁকে স্টলে বসে পড়তে দেখে অবাক হচ্ছেন।
মেলার ছোট্ট স্টল যেন তাঁর স্টাডি রুম। তাঁর মা সোনি সুলতানা বলেন, আমাদের গ্রুপে ১০ জন সদস্য রয়েছেন। মেয়েকেও গ্রুপে নিয়ে এসেছি। সে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই জোগাচ্ছে। স্টলের মধ্যেই যদি পড়াশোনা না করে, তাহলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে কী করে। আমার স্বামী অসুস্থ। সংসার চলবে কী ভাবে।
কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ বলেন, আমি ওঁর শিল্পী সত্তাকে সম্মান জানাই। সাফল্য কামনা কর। আরও এগিয়ে যাক এটা চাই। আমার কাছে কোনও প্রয়োজনে এলে যথাসাধ্য সাহায্যে করার চেষ্টা করব। -নিজস্ব চিত্র