জলপাইগুড়ি শহরে ১৪ জন পড়ুয়া নিয়ে চলছে প্রাইমারি স্কুল
বর্তমান | ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া বলতে একজন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রী সাকুল্যে দু’জন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সবমিলিয়ে পড়ুয়া ১৪ জন। তাও আবার সবদিন সকলে আসে না। কোনওদিন স্কুলে আসে পাঁচজন, কোনওদিন হাজির থাকে সাতজন পড়ুয়া। শিক্ষক তিনজন। এই ছবি কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের নয়। জলপাইগুড়ি শহরে খোদ ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা পুলিস লাইনের ভিতরে চলা সরকারি রামচন্দ্র স্মৃতি প্রাথমিক স্কুল চলছে এভাবেই।
একসময় এই স্কুলে পড়ুয়া গিজগিজ করত। কিন্তু এখন এই স্কুলের প্রতি বিমুখ অভিভাবকরা। ফলে প্রতিবছরই কমছে পড়ুয়া। গতবার সব মিলিয়ে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৭। এবার সেখান থেকে একলাফে কমে ১৪ জন। এভাবে পড়ুয়া কমলে অচিরেই হয়তো স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে, এই আশঙ্কা গ্রাস করেছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। ফলে ছাত্রছাত্রী জোগাড়ে তাঁরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এলাকায় মাইকিং ও লিফলেট বিলিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে ঠেকলেও স্কুল বাঁচাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলা শিক্ষাদপ্তর। ২০১৫ সাল থেকে জেলা পুলিস লাইনের ভিতরে চলা ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন না। সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেখানে দায়িত্বভার নিয়েছেন মিন্টু দাশগুপ্ত। তবে স্কুলের হাল দেখে রীতিমতো হতাশ তিনি। বললেন, স্কুলে খাতায়কলমে ১৪ জন পড়ুয়া। একটি শ্রেণিতে একজন, দু’জন পড়ুয়া। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পড়ুয়া জোগাড় করতে বাড়ি বাড়ি যাব। মাইকিং করব।
যদিও এসবে আদৌও কোনও লাভ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে স্কুলের সহ শিক্ষিকা সুস্মিতা হোড়ের। তিনি বলেন, গতবারও আমরা পড়ুয়া ধরে আনতে এলাকায় ঘুরেছিলাম। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের শহরের নামী স্কুলে পড়াতে চান। আমাদের স্কুলের মাঠে তাঁদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলো করে। কিন্তু পড়ে অন্য স্কুলে। এটা বড় আক্ষেপের।
রামচন্দ্র স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর কোনও ঘাটতি নেই। আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যায় রয়েছে বেঞ্চ। পুরসভার তরফে পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচালয়, মিড ডে মিল রান্নার ঘর সবই আছে। কিন্তু যাদের জন্য এতসব ব্যবস্থা সেই পড়ুয়াই নেই। ফলে বেঞ্চে ধুলো জমছে।
অভিযোগ, হাতেগোনা যে দু’চারজন পড়ুয়া আসে, তাদের নামমাত্র পড়াশোনা করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাঠে খেলাধুলো করে ছাত্রছাত্রীরা। তারপর মিড ডে মিল খেয়ে বাড়ির পথ ধরে। যদিও স্কুলে কম পড়ুয়া থাকায় তাদের প্রত্যেককে হাতে ধরে পড়াশোনা শেখানো হয় বলে দাবি শিক্ষকদের।