বাবলা সরকার খতম অভিযান নির্ভুল করতে প্ল্যান ‘এ’ এবং ‘বি’, ১০ লক্ষ টাকার সুপারি
বর্তমান | ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, মালদহ: মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে খুনের অপারেশন নির্ভুল করতে জোড়া প্ল্যান করেছিল আততায়ীরা। মালদহের দাপুটে তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে খুনের তদন্তে উঠে আসছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, বাবলার মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্ল্যান ‘এ’ ও ‘বি’ তৈরি করেছিল আততায়ীরা। প্রথম পরিকল্পনা ভেস্তে গেলে দ্বিতীয় ছক অনুযায়ী খুন করা হয় বাবলাকে। খুনের পর দ্রুত মালদহ ছেড়ে বিহারে পালিয়ে যাওয়ার রুটও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল ‘সুপারি কিলার’রা। অপারেশনের সলতে পাকানো হয়েছিল তারও কিছুদিন আগে। টানা প্রায় ১০ দিন রেকি করা হয় বাবলার গতিবিধি। তৃণমূল নেতাকে খুনের তদন্ত যত এগচ্ছে, উঠে আসছে এমন সব একাধিক তথ্য। প্রাথমিক তদন্ত বাবলা খুনের পিছনে ব্যবসায়িক হিংসাকেই প্রধান কারণ বলে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। তার সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্রও আছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিস। তবে সুপারি দিয়ে খুন করানোর নেপথ্য ‘আড়কাঠি’টা কে, এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিস।
বাবলার মতো প্রবল জনপ্রিয় নেতাকে খুন করা যে সহজ হবে না, ভালো করে জানত ষড়যন্ত্রকারীরা। সেজন্য সবদিক নিশ্ছিদ্র করে এগিয়েছিল তারা। তাঁকে সরানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হতেই শুরু হয় অপারেশনের প্রাথমিক ছক কষা। প্রতি বছর নিজের এলাকায় ভবানী মোড়ে বড়দিনের কার্নিভ্যাল করতেন দুলাল। এবারের বড়দিনে সেই কার্নিভ্যাল করবেন কি না, কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত অনুরাগীদের অনুরোধে কার্নিভ্যাল করতে রাজি হন। আততায়ীদের প্ল্যান ‘এ’ ছিল বড়দিনে উৎসব প্রাঙ্গণে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে বাবলাকে খতম করা। কিন্তু ঘটনাস্থলেই ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে দেখে পিছু হঠে ষড়যন্ত্রকারীরা। কার্নিভ্যালে বেশিরভাগ সময় অনুগামী ও গুণগ্রাহীরা ঘিরে রাখতেন বাবলাকে। ফলে প্ল্যান ‘এ’ সফল হয়নি। তারপরেই বদলে যায় খুনের সময় ও স্থান। সময় নষ্ট না করে কার্নিভ্যাল শেষ হওয়ার পরের দিন থেকেই কাউন্সিলারকে খতমের প্ল্যান ‘বি’ বাস্তবায়িত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে আততায়ীরা।
দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিস সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। ধৃতদের মধ্যে দু’জন বিহারের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিহারের কাটিহার জেলার আজমনগর থানা এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ শামি আখতার (২০) ও ইংলিশবাজারের গাবগাছি যদুপুরের বাসিন্দা বাসিন্দা টিঙ্কু ঘোষকে (২২)। তৃতীয় ধৃতের নাম আব্দুল গনি (২০)। সে বিহারের কাটিহার জেলার শালমারি থানা এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের জেরা করে খুনের মাস্টারমাইন্ডের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলে ইংলিশবাজার পুলিস। তাদের ১৪ দিনের পুলিস হেফাজত হয়েছে। মালদহ সিজেএম কোর্টের সহকারী সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল বলেন, জেরায় ধৃতরা খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এদিন ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে বাবলাকে খুনের পরিকল্পনা করে হয়েছিল বলে শুনতে পাচ্ছি। যতটুকু শুনেছি, ছ’জন এই খুনের পিছনে সরাসরি যুক্ত ছিল। পাঁচজন পুলিসের জালে ধরা পড়েছে। একজন পলাতক।