নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: এ পাঁঠা সে পাঁঠা নয়। এ যে চোখের মণি। আদরের ধন। স্নেহের এই পাঁঠার জন্মদিন। ১৫০ জন নিমন্ত্রিত। তাঁদের কী খাওয়ানো হবে? কাটা হল মুরগি। কব্জি ডুবিয়ে মুরগির ঝোল আর ভাত খেলেন অতিথিরা। সঙ্গে কাটা হল কেক। চুঁচুড়ার বুনো কালীতলার বালিপুকুরের বাসিন্দা নিঃসন্তান বাবলু ওঁরাও পুষছেন সেই পাঁঠাটি। সাধ করে গালভরা নাম রেখেছেন ‘রাজা’। বাবলু এবং তাঁর স্ত্রীর নয়নের মণি সে। ‘তার জন্মদিন হবে না তো কার হবে?’
সেই কবে মালামাল উইকলি সিনেমায় মানুষের ‘পাঁঠা প্রেম’ দেখিয়ে ছিলেন পরিচালক প্রিয়দর্শন। সেখানে লীলারামের স্ত্রীর সন্তানসম ছিল গাট্টু। তাকে নিয়ে সিনেমাটিতে বিস্তর নাটক হয়েছিল। এবার পর্দার বাইরে বাস্তবের চুঁচুড়ায় দেখা মিলল একটি ‘স্নেহের ধন’ পাঁঠার।
রাজার মান রাখতে বাবলু ওঁরাও জন্মদিনের সভা বাহারি আলো দিয়ে সাজান। রঙিন বেলুন আসে। কেক কাটা হয়। সে এক জমকালো ভোজসভা। মূল আকর্ষণ, মুরগির মাংস। আর কুচকুচে কালো চিকন চেহারায় জামা-টুপি পরে রাজাও হাজির। মাঝে মাঝে ‘ব্যা’ করে ডেকে সম্ভবত ‘ভালো করে খাও’ ইত্যাদি বলতেও চেয়েছে। এ পাঁঠা তো আসলে সে পাঁঠা নয়!
রাজাকে নিয়ে আছে রোমহর্ষক গল্পও। ২০২৪ সাল। জানুয়ারি মাস। তাকে বুনোকালী মন্দিরে বলি দিতে আনলেন এক ভক্ত। কিন্তু হাঁড়িকাঠে ওঠার আগেই প্রাণীটি পালাল। তারপর দৈবাদেশে কি না কে জানে, এসে পৌঁছল বাবলুর বাড়ি। পাঁঠার মালিকও এল পিছু পিছু। বাবলুর সঙ্গে জোর বিবাদ। তবে পাঁঠার দাবি ছাড়ল না বাবলু। তারপর ক্রমে মায়া গাঢ় হল। রাজা বলে শুরু হল ডাকা। সন্তানের মতো আদরে হৃষ্টপুষ্ট হতে থাকল রাজা।
বাবলুবাবু ছোটখাট ব্যবসা করেন। বছরের শুরুতে তাঁর বন্ধুরা বাবলুর ছেলের জন্মদিন করতে হবে বলে দাবি জানান। ফলে রাজার জন্মদিন না জানা সত্ত্বেও এ দিনটি জন্মদিবস হিসেবে ঘোষণা হল। বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠান। এখন পোষ্য পাঁঠা ও তার ‘বাবা-মা’কে নিয়ে চর্চায় মশগুল চুঁচুড়া শহর। বাবলু বলেন, ‘রাজা সন্তানের অভাব পূরণ করেছে।’ আঞ্চলিক ইতিহাসের চর্চাকার সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনা শুনে হেসে বললেন, ‘মালামাল উইকলিতে এমন ঘটনা ছিল। তা যে বাস্তবেও হতে পারে, সেটাই বিস্ময়ের।’
অধিকাংশ বাঙালির ধারণা, পাঁঠা বা ছাগল হয় শিং দিয়ে গুঁতোয়, না হলে মাংস হয়ে থালায় থাকে। সুকুমার রায়ও লেখেন, ‘ছাগল ভাবে সামনে একি/একটুখানি গুতিয়ে দেখি/গুতোর চোটে ধড়াধ্বড়/হুড়মুড়িয়ে ধুলোয় পড়...।’
তবে এ পাঁঠা সে পাঁঠা নয়। তার বার্থ ডে’তে মুরগি কাটা হয়।