• পুরুলিয়ার পর দলমাতেও কি এবার ব্যাঘ্রাভিষেক?
    এই সময় | ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • বর্ষশেষে প্রথম বার বাঘ দেখেছিল পুরুলিয়া। বর্ষবরণে একই ভাবে বাঘের ‘অভিষেক’ হতে পারে এতকাল হাতির জন্য বিখ্যাত দলমা পাহাড়ের! ঝাড়খণ্ডের এই অভয়ারণ্যে গত কয়েক দশকে কেউ বাঘ দেখেনি। বাঘের করিডর থাকার কথাও মনে করতে পারছেন না অভিজ্ঞ বনাধিকারিকরা। স্থানীয় ভাবে জানা যাচ্ছে, শেষবার দলমা পাহাড়ের কাছাকাছি নাকি বাঘ দেখা গিয়েছিল সেই ১৯৮৯ সালে, কমপক্ষে ৩৬ বছর আগে! এ দিকে বাংলার পুরুলিয়া সীমানা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল থেকে বাঘ এখন রওনা দিয়েছে সেই দলমার পথেই।

    সিমলিপালের বাঘিনি জ়িনাত বাংলা ছাড়ার পরেই, নতুন বছরের প্রথম দিনে বাঘের ছায়া পড়েছিল পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। কারণ, পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সীমানা এলাকা চান্ডিলের যে গ্রামে বাঘের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছিল, সেই এলাকা পুরুলিয়া থেকে মাত্র ৩০–৪০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু আতঙ্ক ছড়ানো জন্তুটি যে বাঘই, সেই প্রমাণ মিলছিল না।

    সেই চান্ডিল এলাকায় গত তিন দিন ধরে ক্যামেরা ট্র্যাপ বসিয়ে রেখেছে ঝাড়খণ্ডের বন দপ্তর। তাতে বাঘের ছবি ওঠেনি, এসেছে শেয়ালের ছবি। কিন্তু এলাকায় পাওয়া পাগমার্ক আর শিকারের শরীরের ক্ষত বিশ্লেষণ করে ঝাড়খণ্ডের বনাধিকারিকরা মনে করছেন, জি়নাতের মতোই কোনও বাঘিনি চলে এসেছে এই এলাকায়। এবং সে পূর্ণবয়স্ক। তবে তার গলায় রেডিয়ো কলার না–থাকায় নির্দিষ্ট অবস্থান জানা যাচ্ছে না।

    তবে এ বার বাঘ এসেছে না বাঘিনি — এই প্রশ্নের থেকেও ঝাড়খণ্ডের বনকর্তারা বেশি উৎসুক তার রুট নিয়ে। কারণ শুক্রবার সন্ধ্যার তথ্য বলছে, চান্ডিল অঞ্চল থেকে চৌকা এলাকা হয়ে সেই ডোরাকাটা হাঁটা দিয়েছে দলমা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির দিকে। দলমার জঙ্গল আর ডোরাকাটার মধ্যে বাধা একটাই — ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়ক। বাঘ সেই রাস্তা পার করে গেলেই তৈরি হবে ইতিহাস। সাম্প্রতিক অতীতে প্রথম বার বাঘের পা পড়বে দলমায়! আর সেখানেই যদি সে না–থামে? বনকর্তাদের বক্তব্য, এই বাঘ যদি দলমার জঙ্গলও পার করে ফেলে, তা হলে সেই জ়িনাতের মতোই সে এসে হাজির হবে বাংলার দুয়ারে, ঝাড়গ্রাম–মেদিনীপুরের সীমানা এলাকায়।

    তবে বনকর্তারা আপাতত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ব্যস্ত। ঝাড়খণ্ডের প্রধান মুখ্য বনপাল সত্যজিৎ সিংয়ের কথায়, ‘যে পথে বাঘটি চলছে, সেখানে মানুষের বসতি ২ শতাংশও নয়। তবু আমরা দলমার অভয়ারণ্য-সহ গোটা এলাকায় ট্র্যাপ ক্যামেরা অ্যাক্টিভেট করেছি। কুইক রেসপন্স টিম গিয়ে গ্রামবাসীদের বলে এসেছে, বনকর্মীদের না-জানিয়ে জঙ্গলে যেন কেউ না–যায়। দলমা অভয়ারণ্যের পথে জাতীয় সড়ক আছে ঠিকই। কিন্তু ওই অঞ্চলে জাতীয় সড়কের নীচে জন্তু-জানোয়ার যাওয়ার তিনটি আন্ডারপাসও রয়েছে। বাঘ সেখান দিয়েও নিরাপদে দলমা ঢুকতে পারে।’

    ঢুকেও যদি যায়, দলমায় বাঘ খাবে কী? সত্যজিতের আশ্বাস, ‘দলমার জঙ্গলে স্পটেড ডিয়ার, বার্কিং ডিয়ার, সম্বর রয়েছে। বাঘ ওখানে পৌঁছে গেলে ওর শিকারের অভাব হবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)