বোষ্টম মোড় পেরিয়ে তিলডাঙা থেকে বাঁদিকে ঘুরেই গ্রামে ঢুকলে চোখে পড়বে কাঁচা রাস্তা। বর্ষাকালে এক হাঁটু জল জমে কাদা হয়। রাস্তার দু’ধারে পতপত করে উড়ছে জোড়া ফুলের পতাকা। আরও কিছুটা এগোলেই দেখা মিলবে ঠিক ২৪ বছর আগের রাতে জ্বালিয়ে দেওয়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। শীতটা জাঁকিয়ে পড়েছিল সে দিন। টর্চ জ্বালিয়ে এক দল দুষ্কৃতী এসে আগুন ধরিয়ে দেয় বাড়িতে। লোকজন ছুটোছুটি করতে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। রাতারাতি সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে ছোট আঙারিয়া। লাল সন্ত্রাসের সেই রাতের কথা মনে পড়লে আজও বুক কাঁপে গ্রামবাসীর।
মুক্তার খাঁ, রবিয়াল ভাঙি, হায়দার মণ্ডল, জয়ন্ত পাত্র, মুক্ত পাত্র–পাঁচজন তৃণমূল কর্মীকে খুন করার অভিযোগ ওঠে। একজনের দেহ মেলেনি আজও। ২০০১ সালের পর থেকেই ৪ জানুয়ারিকে ‘ছোট আঙারিয়া’ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে তৃণমূল। গ্রামে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা মিললেও আজও উপেক্ষার সংখ্যাই বেশি।
আবাস যোজনার অসম্পূর্ণ ঘরে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন আনিশা মণ্ডল। আনিশা বলেন, ‘শহিদ পরিবারেরও কাউকে একটা চাকরি পর্যন্ত করে দেওয়া হলো না। দিদি চেয়েছিলেন, শুনেছি এখানকার নেতাদের নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু, কেউ কিচ্ছু পায়নি।’ আনিশাকে সমর্থন করে একই কথা বলেন তৃণমূল স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা ছোটো আঙারিয়ার পাঁচ শহিদের মধ্যে অন্যতম মুক্তার খাঁ-র দাদা আক্তার আলি খাঁ। আক্তার বলেন, ‘শহিদ পরিবারের কেউ চাকরি পেল না। কেন জানি না।’
চাপা অভিমান চোখে মুখে নিহত বক্তারের স্ত্রী। স্থানীয় নেতৃত্বের উপরে রয়েছে ক্ষোভও। আনিশা বলেন, ‘শুধুমাত্র দিদির জন্যই সব কষ্ট সহ্য করে এখনও হাসি মুখে বেঁচে আছি। শেষ দিন পর্যন্ত দলটাকে ভালোবেসে বক্তার মণ্ডল মারা গেল! আমার এক ছেলে ও এক মেয়েও মারা গিয়েছে। কেউ খোঁজ নেয় না। অনেক অভাব-অভিযোগ আছে।’
গড়বেতার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলিরা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে জামিনও পেয়ে যান। এই ঘটনায় বক্তারের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। এই মামলার রায়দান এখনও বাকি। পালাবদলের পর এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা ভোটে হেরেও হারিয়ে যায়নি সিপিএম। ছোটো আঙারিয়া কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত তপন ঘোষ বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। আদালত আমাদের মুক্তি দিয়েছে।’
তবে, গত কয়েক বছরের এলাকায় অনেকটাই উন্নতি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। এমনকী সন্ত্রাসের পরিবেশ নেই বলেই জানান হায়দার মণ্ডল, আয়ুব মণ্ডলরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘ছোটো আঙারিয়া দিদির হৃদয়ে যেমন চিরদিন থাকবে, আমাদের কাছেও তেমনই থাকবে।’
কিন্তু সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সুবিচার কি মিলবে? দোষীরা কি শাস্তি পাবে? অপেক্ষায় ছোট আঙারিয়া।
তথ্য সহায়তা : মণিরাজ ঘোষ, গড়বেতা