• কার কী নিরাপত্তা, রিপোর্ট চাইল রাজ্য
    এই সময় | ০৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    মালদায় তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে খুনের ঘটনার খবর সামনে আসতেই বৃহস্পতিবার পুলিশ–প্রশাসনের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোটা রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–নেত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিয়ে সব জেলার পুলিশ সুপার ও কমিশনারেটের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করলেন রাজ্যের ডিরেক্টর (সিকিউরিটি) বা নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পান্ডে।

    বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক দলের কোন নেতা–নেত্রীরা কী ধরনের পুলিশি নিরাপত্তা পাচ্ছেন, কতজনের নিরাপত্তা গত কয়েক বছরে তুলে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে শুক্রবার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেন তিনি। আগামিকাল, রবিবারের মধ্যে এই রিপোর্ট দিতে হবে নিরাপত্তা অধিকর্তার কাছে।

    মালদার ইংরেজবাজার পুরসভার ছ’বারের তৃণমূল কাউন্সিলার দুলাল সরকার রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা পেতেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০০৭ ও ২০১৭ সালে দু’বার তাঁকে গুলি করে খুনের চেষ্টা হয়। ওই দু’বার আততায়ীরা সফল হয়নি। কিন্তু ২০২১ সালে তাঁর নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়েই বৃহস্পতিবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুলালের নিরাপত্তা কেন তুলে নেওয়া হলো, তা নিয়ে অসন্তুষ্ট তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশও।

    মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরই শুক্রবার রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা তড়িঘড়ি বিভিন্ন জেলায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা–নেত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা ও কমিশনারেটের পুলিশকর্তাদের সঙ্গে। ভিআইপি নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেন নিরাপত্তা অধিকর্তাই। তিনিই আবার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

    সূত্রের খবর এ দিন ভার্চুয়াল বৈঠকে নিরাপত্তা অধিকর্তা জানান, কোন রাজনৈতিক দলের কোন নেতা–নেত্রী কী ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন, কবে শেষ ওই নিরাপত্তা ঠিক করা হয়েছিল, সম্প্রতি কার কার নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে, সেটা কীসের ভিত্তিতে হয়েছে, নতুন করে থ্রেট অ্যানালিসিস করে কতজনকে আরও নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন— এই সব তথ্য রবিবারের মধ্যে জমা দিতে হবে।

    রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু ভিআইপি নিরাপত্তা নয়, জেলার সংশোধনাগারগুলিতে দাগি বন্দিদের উপরও কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সংশোধনাগারের ভিতর থেকেও অনেক দাগি দুষ্কৃতী আপরাধমূলক অপারেশন চালাচ্ছে, এমনকী খুনের ঘটনার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। অতীতে সুবোধ সিংয়ের মতো বেশ কয়েকজন অপরাধীর নাম উঠে এসেছে, যারা জেলে বসেই তার সঙ্গীদের কাজে লাগিয়ে অপহরণ, খুন, তোলাবাজির মতো অপরাধ সংগঠিত করছে।

    পুলিশ সূত্রের খবর, জনপ্রতিনিধি বা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীদের স্টেটাস ও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখে সাধারণ পাঁচটি স্তরে সিকিউরিটির বন্দোবস্ত করা হয়। এক্স, ওয়াই, ওয়াই প্লাস, জে়ড ও জ়েড প্লাস। নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা হয়— কোনও সরকারি পদে থাকার কারণে তাঁর জীবনের ঝুঁকি কতটা রয়েছে, কোনও সরকারি পদে না–থাকলেও রাজনৈতিক বা অন্য কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদের জন্য কতটা ঝুঁকি থাকতে পারে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা ইনপুট থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে কী কী তথ্য রয়েছে। এ সবের ভিত্তিতে নিরাপত্তার খতিয়ান তৈরি করে তা ডিরেক্টরের (সিকিউরিটি) কাছে পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট সব জেলা পুলিশ ও কমিশনারেটের কর্তাদের।

  • Link to this news (এই সময়)