আড়কাঠির খপ্পরে পড়ে দু’বছর আগে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিল দুই রোহিঙ্গা কিশোরী। বরাত জোরে রেলরক্ষী বাহিনীর চোখে পড়ে যায় তারা। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে তাদের উদ্ধার করে রাখা হয় কোচবিহারের শহিদ বন্দনা হোমে। অবশেষে আত্মীয়ের কাছে ফিরতে চলেছে দুই বোন। পঞ্জাবের মোহালিতে কাকা–কাকিমার কাছে পাঠানো হচ্ছে তাদের। গত দু’ বছর ধরে ওই হোমই হয়ে উঠেছিল দু’জনের ঘরবাড়ি।
মায়ানমারে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সময়েই মা–বাবার হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছিল দুই রোহিঙ্গা কিশোরী। তখন তারা বয়সে অনেকটা ছোট। অসমে কোনও একটি জায়গায় পরিচয় গোপন করে মা–বাবার সঙ্গে থাকার সময়েই আড়কাঠিদের নজরে পড়ে কিশোরীরা। কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাদের ট্রেনে চাপিয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে দিল্লিগামী ট্রেনে গুটিসুঁটি মেরে ১৩ এবং ১৪ বছরের দুই কিশোরীকে বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের।
সঙ্গে যাঁরা ছিল, তাঁদের আচরণেও সন্দেহ হয় বাহিনীর লোকেদের। দুই কিশোরীকে ডেকে কথা বলার সময়ে ধরা পড়ে অসংলগ্নতা। এরপর আসল ঘটনা বুঝতে বেশি দেরি হয়নি জওয়ানদের। ট্রেন থেকে দুই কিশোরীকে আটক করে নিয়ে গেলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের রাখা হয় শহিদ বন্দনা হোমে। জানা যায়, মায়ানমার থেকে দুই কন্যা মা–বাবার সঙ্গে অসমে অনুপ্রবেশ করেছিল। পুলিশ বাবা–মায়ের খোঁজ শুরু করতেই জানা যায়, তাঁরা অসমে ডিটেনশন সেন্টারে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।
দু’বছর আগে মা–বাবার হদিশ পেলেও আইনি জটিলতায় দুই বোনকে তাঁদের কাছে ফেরানো যাচ্ছিল না। তবে খোঁজ পাওয়া যায়, পঞ্জাবের মোহালিতে থাকা কাকা–কাকিমার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিকট আত্মীয় হিসেবে তাঁদের হাতেই দুই বোনকে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কোচবিহারের জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন ,‘দুই কিশোরী যাতে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে সে জন্য আইন মেনে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনি বাধায় বাবা–মায়ের কাছে ফেরানো যাচ্ছে না। হোম থেকে একটি পরিবারের কাছে তারা ফিরতে পারছে এটাই বড় বিষয়। এতে মানসিক ভাবেও দুই কিশোরী অনেকটা স্থিরতা পাবে।’
গত কয়েক বছর ধরে উত্তর–পূর্ব ভারতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। সেই সুযোগে নাবালক–নাবালিকাদের পাচার করার মতো অপরাধও বেড়ে গিয়েছে। সে রকমই কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে আড়কাঠিরা দুই কিশোরীকে পাচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল বলে অনুমান পুলিশের।