কাঁকসার মিরেপাড়া থেকে স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছিল কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র মহম্মদ হাবিবুল্লাকে। তাকে জেরা করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরও কয়েকজন জঙ্গিকে। সম্প্রতি গোয়েন্দারা জানতে পারেন, হাবিবুল্লা একা নয়, দুর্গাপুর ও লাগোয়া এলাকায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জঙ্গি ডেরা বেঁধেছিল।
তবে পাকড়াও করার আগেই চম্পট দেয় ওই জঙ্গিরা। এর পরেই অন্ডাল থেকে বুদবুদ— দুর্গাপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় পুলিশি নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। আসানসোল–দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, ‘অন্ডাল থেকে বুদবুদ, এই ইস্ট জোনে প্রতিটি থানা এলাকায় বাইরে থেকে কারা আসছে, কী কারণে এখানে আসছে, কার বাড়িতে আসছে, সব খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সন্দেহজনক মনে হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দেড়েক আগে ভিন রাজ্য থেকে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)–এর ৭–৮ জন সদস্য দুর্গাপুরের বিজড়া গ্রামে আসে। তাদের উপস্থিতি টের পান আইবি–র প্রতিনিধিরা। ময়দানে নেমে তাঁরা জানতে পারেন, গ্রামে আসা ওই বহিরাগতরা প্রত্যেকেই জেএমবি–র সদস্য। ভিন রাজ্য হয়ে দুর্গাপুরে এসে গা ঢাকা দিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘জেএমবি সদস্যরা বেশ কয়েকদিন ধরে বিজড়া গ্রামে ছিল। আমরা খবর পাওয়া মাত্র পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। পুলিশ তৎপর হতেই ওরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।’
দুর্গাপুর ও লাগোয়া গ্রামীণ এলাকায় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলি যে জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে তা প্রথম টের পাওয়া গিয়েছিল গত বছরের জুন মাসে। ২২ জুন কাঁকসা থানা এলাকার মিরেপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মানকর কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মহম্মদ হাবিবুল্লাকে। বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল–ইসলামের নতুন মডেল শাহাদাত–এর এই রাজ্যে কর্মকাণ্ডের মাথা ছিল হাবিবুল্লা।
গ্রেপ্তারের পরে হাবিবুল্লার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছিল এসটিএফ। তাকে জেরা করে ও বাজেয়াপ্ত ল্যাপটপ থেকে শাহাদাত সম্পর্কে বহু তথ্য পান তদন্তকারীরা। এমনকী হাবিবুল্লাকে জেরা করে নদিয়ার নবদ্বীপ থানার মোল্লাপাড়া থেকে হারেজ শেখ ও মঙ্গলকোট থেকে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সামাজিক মাধ্যমে প্রত্যেকের মগজ ধোলাই করত হাবিবুল্লা। বর্তমানে হাবিবুল্লা বন্দি দুর্গাপুরের ফুলঝোড় এলাকার উপ–সংশোধনাগারে।
বিজড়া গ্রামে জেএমবি–র যে সদস্যরা ডেরা বেঁধেছিল তারা স্থানীয় ছেলেদের মগজ ধোলাই করেছিল কি না তা তদন্ত করে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের কর্তারা। একই সঙ্গে কড়াকড়ি করা হয়েছে নতুন পাসপোর্ট ও পুনর্নবীকরণ ভেরিফিকেশনেও। আবেদনকারীরা কেউ বাংলাদেশের বাসিন্দা কি না তা বুঝতে বাবা–মায়ের ভোটার ও আধারকার্ড দেখাতে হচ্ছে। যাচাই করে দেখা হচ্ছে, আবেদনকারীরা সত্যিই এই দেশের নাগরিক কি না।