তেলের খরচ বেড়েছে, বাসের মেইন্টেনেন্স বেড়েছে, সেই তুলনায় বাসে যাত্রী নেই। অটো-টোটোয় যাত্রীরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পান হয়তো। বাসে করে শ্রীরামপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার বদলে তাঁরা বিকল্প পরিবহণের সুযোগ নেন। এদিকে যাত্রী না থাকায় বাসের যাত্রাও কমছে। ফলে গাড়ি চালিয়ে তেলখরচ ওঠে না। তবু সুদীপবাবু চেয়েছিলেন, প্রাচীন এই বাসরুটের শেষ বাসটি যদি তার যাত্রার শতবর্ষ পূর্ণ করতে পারে। কিন্তু তাঁর সেই চাওয়াটাও পূর্ণ হল না।
এই তিন নম্বর বাসরুটটি হুগলি জেলার লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ছিল একসময়। শ্রীরামপুর রিষড়া কোন্নগর উত্তরপাড়া পেরিয়ে দক্ষিণেশ্বর হয়ে বাগবাজার শ্যামবাজার-- এই ছিল রুট। মফস্বলি চাকুরিজীবী মানুষের উত্তর কলকাতা যাওয়ার একমাত্র সহজ অবলম্বন ছিল এই তিন নম্বর বাস।
তবে এবার তার চাকায় পড়েছে চেন তালা। চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একসময়ের জিটি রোডের পরিচিত তিন নম্বর বাসের পথচলা। গত পাঁচ বছর ধরে বাসের আগের যাত্রাপথ ছোটো করে বাসটি দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত চলছিল।
জানা যায় ১৯২৭ সালে শ্রীরামপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য পথচলা শুরু হয় তিন নম্বর বাসের। হুগলি, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতা-- চারটি জেলাকে জুড়ে দিয়েছিল এই বাস। এক সময় অনেক বাস ছিল এই রুটে। ২০২৪-এর শেষের সঙ্গেই নিজেরে পথচলাতেও সমাপ্তি টানল শ্রীরামপুরের বহু প্রাচীন এই বাসটি।
গত পাঁচ বছর ধরে চলছিল টিকে থাকার লড়াই। শেষে একটি মাত্র বাস প্রদীপের সলতের মতো জ্বলছিল। সেই বাসের মালিক নিজেই কখনও বাস ড্রাইভার, আবার নিজেই বাস কন্ডাক্টর। শুধুমাত্র নিজের বাসকে ভালোবেসে, এতদিন এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাস মালিক সুদীপ গোস্বামী। তাঁর স্বপ্ন ছিল এই বাসরুটটি তার ১০০ বছর পূর্ণ করা পর্যন্ত বাসরুটটিকে বাঁচিয়ে রাখবেন তিনি। হল না সেটা। সেঞ্চুরির আগে, ৯৭-তেই শেষ হল তাঁর লড়াই।