সিনেপ্রেমীদের ভিড়ে একসময় গমগম করতো গোটা এলাকা। ম্যাটিনি শো-এ ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝুলতো হামেশাই। চা-স্ন্যাক্স বিক্রেতাদের ভিড় থাকত গোটা রাস্তা জুড়ে। বাঁকুড়ার বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই এলাকা। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে থিয়েটার হল উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন। লোকমুখে রাস্তাটির নামই হয়ে যায় ‘সিনেমা রোড’। বর্তমানে খাঁখাঁ করে গোটা এলাকা। মাল্টিপ্লেক্সের যুগে বাঁকুড়া শহরের ৫ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ‘সিনেমা পাড়া’র স্মৃতিটুকুই পড়ে রয়েছে।
বৈষ্ণব বাঙালি কবি বড়ু চন্ডীদাসের নামে একসময় তৈরি হয়েছিল থিয়েটার হল। ৭০০ আসনের সেই হল উদ্বোধনে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২০ থেকে ৪০-এর মধ্যে তৈরি হয় বাসন্তী, বীণাপানি, চন্ডিদাস চিত্রমন্দির সিনেমা হল। শিবানী, কুসুম, বিশ্বকর্মা-সহ একের পর এক ছ'টি সিনেমা হলই বন্ধ বাঁকুড়া শহরে! ওই জায়গায় কোথাও তৈরি হচ্ছে বহুতল। কোনও হল গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আবার কোনওটি হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য। সিনেমা পাড়ায় এলাকায় খুব প্রয়োজন ছাড়া পা রাখেন না কেউ।
স্থানীয় খুচরো ব্যবসায়ী থেকে হলগুলির সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও কাজ হারিয়ে পথে বসেছেন। সিনেমা হলের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘদিনের কর্মী শিবপ্রসাদ কর্মকার বলেন, ‘প্রতিটি সিনেমা হলই চলছিল, কোথাও আইনি জটিলতা, কোথাও পারিবারিক সমস্যার কারণে হলগুলি একে একে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম হলগুলিকে বাঁচাতে, কিন্তু পারিনি।’
সিনেমা দেখতে হল না থাকায় রবীন্দ্র ভবন ভাড়া নিয়ে প্রজেক্টারের সাহায্যে নিজেদের ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করছেন কেউ কেউ। শনি-রবি দু'দিন ধরে এই রবীন্দ্র ভবনে দেখানো হবে 'ফাটকা' নামে একটি বাংলা সিনেমা। ফাটকার পরিচালক শ্রীমন্ত চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আমাদের শহরে কোনও হল নেই এটা অত্যন্ত বেদনার। আমার ছবি একদিন হলে দেখানো হবে, ছোটো বেলায় এই স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্নপূরণ হলো, তবে হলে তা দেখানোর সুযোগ হলো না।’ তবে আগামী দিনে হল তৈরির জন্য উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি।
‘খাদান’ হোক বা ‘পুষ্পা ২’, সিনেমা দেখতে এলাকার মানুষ এখন ছোটেন দুর্গাপুরে। এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ এলাকার নিঝুম পরিবেশ নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। স্থানীয় বাসিন্দা প্রতাপ দাস বলেন, ‘দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এখানে শুধু মানুষের মাথা দেখা যেত। এখন ফাঁকা ময়দান। খারাপ লাগে। সিনেমা দেখার ইচ্ছে হলে ছুটতে হয় দুর্গাপুর।’ সকলেই বলছেন, সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে শহরে একটি সিনেমা হল তৈরি হলে ভালোই হয়।