নিজস্ব প্রতিনিধি, মঙ্গলকোট: রবি হাঁসদার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে মঙ্গলকোটের মুসুরি গ্রাম। বরণ করে তাঁকে ঘরে তোলা হবে। ছোট থেকে তাঁর লড়াই চোখের সামনে দেখেছে প্রতিটি বাসিন্দা। বুটজুতো ছিল না। সেটাও অন্যের কাছে থেকে জোগাড় করতে হয়েছিল। টাকার অভাবে ট্রাকে যাতায়াত করেছেন। গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভাতারের একটি মাঠে তিনি প্র্যাকটিস করেছেন। সেখান থেকে কতদিন পিকআপ ভ্যানে চড়ে বাড়ি ফিরেছেন তার ইয়াত্তা নেই। পুষ্টিকর খাবার বলতে ছিল পান্তাভাত। তা খেয়েই ফুটবলের ময়দান কাঁপিয়ে দিয়েছে গ্রামের ছেলেটা। রবির কিরণে আজ উদ্ভাসিত বাংলা ফুটবল টিম। সন্তোষ ট্রফিতে ১২টি গোল করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ফাইনাল ম্যাচে তাঁর ক্যারিশমা দেখেছে গোটা বাংলা। সেই থেকে মঙ্গলকোটের এই গ্রাম লাইম লাইটে। ‘ভিআইপি’রা তাঁর ঘরে আসছেন। শুক্রবার বাড়িতে গিয়ে রবির মা’কে শুভেচ্ছা জানান বর্ধমান জেলা পরিষদের মেন্টর মহম্মদ ইসমাইল, প্রাক্তন সভাধিপতি দেবু টুডু। ভাতার থেকে কৈচর যাওয়ার পাশেই রবির গ্রাম। ছোট মাটির বাড়িতে থাকেন। আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকায় একতলা পাকাবাড়ি তৈরি করেছেন। ছোট রুমে পুরস্কারে ভর্তি। বড় বড় মেডেল ছাড়া এই ঘরে আর অন্যকিছু রাখার জায়গা নেই। বাড়িতে থাকেন রবির মা তুলিসা হাঁসদা। ছ’মাস আগে তাঁর বাবা সলতান হাঁসদা মারা গিয়েছেন। সন্তোষ ট্রফি জিতে তিনি কলকাতায় ফিরেছেন। কিন্তু, একের পর এক অনুষ্ঠানের জন্য তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি। তাঁর মা বলেন, ‘ফাইনাল খেলা শেষ হওয়ার পর ছেলে ফোন করে। ও চিৎকার করে বলে ‘মা আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি’। আমি গোল করতে পেরেছি। তুমি মোবাইলে তা দেখতে পাবে।’ ছেলের এমন কথা শুনে আনন্দশ্রু ধরে রাখতে পারেননি তাঁর মা। তিনি বলেন, ছেলেকে ঠিকমতো খেতে দিতে পারিনি। কোনও কোনও দিন ও শুধু পান্তাভাতের সঙ্গে তেল এবং নুন মিশিয়ে খেলতে গিয়েছে। আমাদের এক কাঠা জমি নেই। দিনমজুরি করে সংসার চলে। আচমকাই ওর বাবা মারা যান। ছেলে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছে। এটা ভাবতেই গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।
রবির জেঠু বুরু মুর্মু বলেন, ও এখন হুগলির চন্দনপুর থেকে কলকাতায় যাতায়াত করছে। রবিবার বাড়ি ফিরবে। ওকে আমরা বরণ করে ঘরে তুলব। অর্থের অভাবে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেনি। দশম শ্রেণিতে ওর পড়াশোনা থেমে যায়। তবে খেলা ছাড়েনি। ফুলবল ওর সঙ্গী। সুযোগ পেলেই মাঠে চলে যেত। কঠোর পরিশ্রমের ফল পাওয়া গিয়েছে।
মুসুরি গ্রাম রবিকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফুটবলারের ঘরের সামনে সর্বক্ষণ প্রতিবেশীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। নতুন প্রজন্মের হাতে থাকা মোবাইলের স্ক্রিনেও ফুটে উঠছে সন্তোষ ট্রফির সেই বিশেষ মুহূর্তের ছবি। রবিকে ঘিরে উন্মাদনায় ভাসছে আট থেকে আশি সকলেই।