সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: জাঁকিয়ে শীত না পড়লেও ঠান্ডার অনুভূতি রয়েছে সর্বত্র। এই সময় নিমেষে গরম খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ পানীয় জল যেন মুখে দেওয়াই দায়। শিরশির করে ওঠে দাঁত। মানুষেরই যদি এই হাল হয়, তাহলে প্রাণীদের কী অবস্থা! বন-জঙ্গলে বিভিন্ন জলাশয়ের জল পান করে তারা। তবে ঝড়খালির ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা তিন বয়স্ক বাঘ সবার থেকে আলাদা। শীতকালে তারা ঠান্ডা জলে মুখ ঠেকাতে চাইছে না। সেকারণে এই তিন বাঘকে উষ্ণ গরম জল দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলের পর তারা ঘরে ফিরে আসে। তারপর দু’ঘণ্টা অন্তর তাদের জলের পাত্রে উষ্ণ গরম জল দিচ্ছেন পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মীরা। সেই জল পান করতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না তাদের। শীতকালে বাঘদের প্রচুর স্ট্রেস হয়। সেটা কাটাতে তাদের জন্য রয়েছে কড লিভার অয়েল। ক্যাপসুল আকারে সেটি মাংসের মধ্যে গুঁজে দেওয়া শুরু হচ্ছে প্রতিদিন। এখানেই শেষ নয়। শীতকালে বাঘের খিদে বাড়াতে গোরুর মাংসের বদলে দেওয়া হচ্ছে মুরগির মাংস।
ঝড়খালির এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে সুন্দর, সোহম এবং সোহিনী নামে তিনটি বাঘ রয়েছে। তাদের আদর-যত্নে কোনও খামতি রাখেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও কর্মীরা। সময়ে খাবার, ওষুধ ইত্যাদি দেওয়া হয়। তবে ঠান্ডা পড়তেই দেখা যায়, বাঘেরা জল কম খেতে শুরু করেছে। এতে তাদের ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা হতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। কেন জলে অরুচি, তা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন, শীতে জল ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় তারা পান করতে চাইছে না। এরপরই উষ্ণ গরম জল দেওয়ার কথা ঠিক হয়। পশু চিকিৎসক আশুতোষ বিশ্বাস বলেন, ওরা রাতে গরম জল ঠিক পান করছে। জলের পাত্রে দু’-তিন ঘণ্টা বাদে বাদে উষ্ণ গরম জল দিচ্ছেন কর্মীরা। ওরা যাতে পর্যাপ্ত জল খায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। শীতকাল এলে মানুষের স্নান করার প্রতি অনীহা তৈরি হয়। কিন্তু এই বাঘদের রেহাই নেই। দিনে অন্তত একবার তাদের স্নান করানো হয়। ঠান্ডা জল গায়ে পড়লে রেগে গিয়ে দু’-চারবার ‘হালুম’, ‘হালুম’ করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বাধ্য ছাত্রের মতো তা সহ্য করে নেয় তারা। -নিজস্ব চিত্র