দূষণ এড়াতে উদ্যোগ, বাগজোলা খালগামী সব নর্দমার মুখে এবার বসবে বিশেষ জাল
বর্তমান | ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: খাল যেন খোলা ডাস্টবিন। যার যখন খুশি, আবর্জনা ফেলে দিয়ে যান খালে। আশপাশের বাসিন্দারা তো বটেই, বাজার-হাটের জঞ্জালও নিয়ে এসে খালে ফেলে চলে যান দোকানিরা। শত চেষ্টা করেও সচেতন করা যাচ্ছে না নাগরিকদের এই অংশকে। পাশাপাশি নর্দমা দিয়ে প্রতিনিয়ত নোংরা জলের সঙ্গে আবর্জনা বয়ে এসে পড়ে খালে। বাগজোলা খালের কথা বলছি। বরানগর, দক্ষিণ দমদম, বিধাননগর সহ আশপাশের এলাকার জল এসে পড়ে এখানে। ফলে দ্রুত মজে যাচ্ছে বাগজোলা খাল। শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই খালের দূষণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশের পর কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। বাগজোলা খালে যে সব নর্দমা এসে পড়ে, তার মুখে বিশেষ ধরনের জাল লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে কোনওভাবেই কঠিন বর্জ্য এসে খালে পড়তে না পারে।
ডানলপ মোড় লাগোয়া কামারহাটি পুরসভা এলাকা থেকে শুরু হয়ে বরানগর, দক্ষিণ দমদম পুরসভা হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে গিয়ে পড়েছে বাগজোলা খাল। ৩৮ কিমি দীর্ঘ এই খালের উৎস থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ কিমি অংশকে আপার বাগজোলা বলা হয়। এই অংশেই দূষণের পরিমাণ সব থেকে বেশি। বেশিরভাগ জায়গায় পাড় বেদখল হয়ে ছোট ছোট ঝুপড়ি তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে গৃহস্থালির আবর্জনা, মলমূত্র খালে ফেলা হচ্ছে। খালপাড়ে রয়েছে অজস্র খাটাল। ফলে গোবর থেকে যাবতীয় বর্জ্য সরাসরি এসে পড়ছে আপার বাগজোলায়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন নর্দমা দিয়ে ভেসে আসা প্লাস্টিক ও আবর্জনা খালে এসে মিশছে। ফলে দূষণ মারাত্মক আকার নিয়েছে। তীব্র দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। তার উপর আবর্জনা পড়ে খাল মজে যাওয়ায় এর নাব্যতাও কমে গিয়েছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই প্লাবিত হয় সংশ্লিষ্ট পুরসভার বিভিন্ন এলাকা। এনিয়ে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। ট্রাইব্যুনালের চাপে ইতিমধ্যেই সেচদপ্তর, পূর্তদপ্তর, নগরোন্নয়ন দপ্তর, পুরসভা সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর একযোগে বাগজোলা খাল পরিদর্শন করেছে।
দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার ৭৩টি নর্দমার জল সরাসরি এই খালে এসে পড়ে। এই ড্রেনগুলির মুখেই লাগানো হবে ওই বিশেষ জাল। এরজন্য পুরসভাকে এস্টিমেট তৈরি করতে বলা হয়েছে। শুরু হয়েছে ডিপিআর তৈরির কাজও। ওই কাজের জন্য যাবতীয় খরচ দেবে রাজ্য সরকার। একইভাবে বরানগরেও পরিদর্শন করা হয়। সেখানে প্রায় ৪৪টি নর্দমা বাগজোলা খালে এসে পড়ে। যদিও সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ১, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি নর্দমা নিয়ে একটি এসটিপি করার কথা থাকলেও জায়গার অভাবে তা করা যায়নি। ফলে ওই জায়গায় নতুন করে পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুরসভার আধিকারিকদের দাবি, নর্দমার মুখ শুধু নয়, খালপাড়ও জাল দিয়ে ঘেরা প্রয়োজন। তাতে আবর্জনা ফেলার সম্ভাবনা কমবে।