• স্বপ্নের আকাশটাকে আরও বড় করতে চান পাহাড়িকন্যা
    এই সময় | ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    ভুটানের সিঞ্চুলা পাহাড়ের কোলে দুর্গম বস্তি আদমা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ২,৮০০ ফুটের কিছু বেশি। আলিপুরদুয়ারের কালচিনির সান্তালাবাড়ি থেকে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গ্রামে পৌঁছতে সময় লাগে কম পক্ষে পাঁচ ঘণ্টা। সেই দুর্গম এলাকায় থেকে মানুষের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন এক পাহাড়ি কন্যা। নাম সোনম জঙ্গমো ডুকপা।

    বক্সা পাহাড়ের ভারত-ভুটান সীমান্তের শেষ ভারতীয় জনপদ আদমা। চার পুরুষের প্রথম কলেজ পড়ুয়া পাহাড়ি কন্যা সোনম। বাবা সামান্য গোপালক। মা গৃহবধূ। দাদা ভুটানে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। অন্য দুই ভাই, জয়গাঁ আর সামসিতকে কাজ করে সামান্য রোজগার করে।

    আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট কার্ডে জেলার অন্য প্রধানদের কর্মদক্ষতার নিরিখে কোনও ভাবেই পিছিয়ে নেই ডুকপা জনজাতিদের মধ্যে একমাত্র নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান সোনম। বরং নিজের কাজে দক্ষতা দেখিয়ে সবার নজর কেড়েছেন ‘স্মার্ট পাহাড়ি কন্যা’। লড়াই করতে গিয়ে দুর্গম আদমার বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। পাহাড়ে ওই চূড়া থেকে তো আর প্রধানের কাজ চালানো সম্ভব নয়। তাই জন্মভিটে ছেড়ে এখন তাঁর ঠিকানা রাজাভাতখাওয়ায় একচিলতে ভাড়াবাড়ি।

    ডুকপার কাহিনি উত্তরণের। এগারো ক্লাসে পড়ার সময়ে প্রথম সোপানে এসে পৌঁছন তিনি। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করে তৃণমূল। ভোটে জিতে প্রথম দফায় কাজ করার করার সুযোগ পান সোনম। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফের জয়ী হওয়ার পরে তাঁকে রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান করে দল। ততদিনে অবশ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে জয়গাঁর ননী ভট্টাচার্য স্মৃতি কলেজে কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন সোনম। পঞ্চায়েতে কাজ করার সঙ্গে পড়াশোনাটা চালিয়ে গিয়েছেন চোয়াল শক্ত করে। মানুষকে পঞ্চায়েতের পরিষেবা দেওয়ার সঙ্গে নিজের স্বপ্নের আকাশটাকে আরও বড় করার সিদ্ধান্ত নেন।

    কী সেটা? সোনম বলেন, ‘ভবিষ্যতে একজন আদর্শ আমলা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কলা বিভাগে স্নাতকের পরীক্ষা শেষ। সঙ্গে নিতে শুরু করেছি ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রশিক্ষণ।’ প্রধান হওয়ায় সকলে তো মান্যতা দিচ্ছে, তারপরেও কেন আমলা হওয়ার স্বপ্ন? তাঁর কথায়, ‘প্রধান হয়ে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, এ কথা ঠিক। তবে সে তো একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কাল জনপ্রতিনিধি না থাকলে আমিও আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতো হয়ে যাব। ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রী অবস্থায় আমাকে মানুষের হয়ে কাজ করার যে সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁর কথার মর্যাদা দিতে আমি আমলা হতে চাই।’

    এখন দুর্গম বাড়ি ছেড়ে রাজাভাতখাওয়ায় থাকতে হয় সোনমকে। তা সত্ত্বেও নিজের গ্রামকে ভোলেননি। সময় পেলেই সকালে হাঁটা লাগান আদমা বস্তিতে। গান গাইতে গাইতে চড়াই-উতরাইয়ের পাকদণ্ডি ভেঙে পৌঁছে যান নিজের গ্রামে। মা–বাবার স্পর্শে একটু সুখের ছোঁয়া পেয়ে ফের ফিরে আসেন নতুন ঠিকানায়, ভাড়া বাড়িতে। ফের লড়াইয়ের জন্য সলতে পাকাতে।

  • Link to this news (এই সময়)