সেই আন্দোলন বর্তমানে অনেকটাই স্তিমিত। তারই মধ্যে সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের সময়–নির্দেশের মোড়কে আরও একবার মনে করিয়ে দিল স্বাস্থ্য ভবন। শুক্রবার জারি করা ৮ পাতার ওই বিজ্ঞপ্তিতে রয়েছে আরও একগুচ্ছ নির্দেশ। যদিও একাধিক চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ, এই বিজ্ঞপ্তির বেশ কিছু নির্দেশ শ্রম আইনের পরিপন্থী।
স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের জারি করা ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, সরকারি চিকিৎসকরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করতে পারবেন না। প্রত্যেক চিকিৎসককে সপ্তাহে ন্যূনতম ৬ দিন এবং ৪২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে। সিনিয়র ডাক্তারদেরও রবিবার রোটেশনাল ডিউটির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, রোগীর অসুস্থতার মাত্রার উপর ভিত্তি করে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডকে গ্রিন, ইয়েলো ও রেড জ়োনে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোন জ়োনের দায়িত্বে কোন চিকিৎসক থাকবেন, তা–ও। চিকিৎসক সংগঠনগুলির অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। সেখানে এমন নির্দেশিকা জারি আসলে প্রতিহিংসা।
বৃহস্পতিবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, আরজি কর নিয়ে আন্দোলন ও কর্মবিরতি চলাকালীন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে দেদার অস্ত্রোপচার করেছেন সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। স্বাস্থ্য দপ্তরের জারি করা ওই নির্দেশে সরকারি শিক্ষক–চিকিৎসকদের ডিউটি রস্টার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আর রোগী স্বার্থে, ইমার্জেন্সি পরিষেবার উন্নতিতে ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে গবেষণার উন্নতির স্বার্থে একাধিক নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে টানা ১২ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে।
সপ্তাহে কমপক্ষে ৪২ ঘণ্টা ডিউটির পাশাপাশি রাতে অন–কল ডিউটিতে যে ডাক্তার থাকবেন, তিনি পরদিন ‘ডে অফ’ নিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের কোনও না কোনও শিক্ষক–চিকিৎসককে রোজ রাতে থাকতে হবে। আরএমও কাম ক্লিনিক্যাল টিউটরের পদ এখন নেই। তাই সেই পদের দায়িত্ব নিতে হবে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপকদের। একই ইউনিটের দু’জনের বেশি শিক্ষক–চিকিৎসক একসঙ্গে ছুটি নিতে পারবেন না। ডে-অফের দিন ছাড়া বাকি দিনগুলিতে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইর্মাজেন্সি বিভাগেও পর্যাপ্ত কর্মীর উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।
এই নির্দেশিকায় কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগকে সপ্তাহে ৬ দিন জেনারেল আউটডোর চালাতে বলা হয়েছে। সেখানে মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ফিজি়ওলজি–সহ প্রি ও প্যারা ক্লিনিক্যাল চিকিৎসকদেরও আউটডোরে কাজে লাগানো যেতে পারে। ভর্তি থাকা রোগীর মৃত্যু হলে ‘ডেথ অডিট’ বাধ্যতামূলক উল্লেখ করা হয়েছে নির্দেশিকায়। সিনিয়র ফ্যাকাল্টিদের রোগীর পরিজনের সঙ্গে নিয়মিত দেখা–সাক্ষাৎ করা ও কথা বলার (পার্টি মিট) নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’–এর তরফে মানস গুমটা ও সাধারণ সম্পাদক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, কেন ডিউটি ৮ ঘণ্টা নয়। তাঁদের অভিযোগ, ‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিকাঠামো নেই, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, জীবনদায়ী ওষুধের অভাব, সাপোর্ট স্টাফ নেই, টেকনিশিয়ান নেই, নার্স নেই, নিয়োগ হয় না দীর্ঘদিন, বদলিতে স্বজনপোষণ রাজনীতি।
বহু চিকিৎসক দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছেন প্রান্তিক মেডিক্যাল কলেজে, প্রোমোশন নেই, ডিএ নেই, আর্থিক ভাবে অন্য রাজ্যের থেকে মাইনে অর্ধেক। এ রকম অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে অনিচ্ছুক ঘোড়াকে চাবুক মেরে স্বাস্থ্য হয় না। এর পরে নৈরাজ্য তৈরি হলে তার দায় কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তরকেই নিতে হবে।’