মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তার পরে আগামিকাল, সোমবার পরিবহণ সচিবকে নিয়ে কলকাতার গণপরিবহণের হাল–হকিকৎ দেখতে পথে নামছেন পরিবহণমন্ত্রী। কিন্তু তাতে বাস–মিনিবাসের সংখ্যা বাড়বে কি না বা সাধারণ মানুষের সমস্যা মিটবে কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই।
এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
শনিবার পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘দু’মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটা বৈঠক হয়েছিল। পথে নেমে মানুষ যাতে সরকারি বাস পান, সে জন্য তিনি বিভিন্ন রুটে চাহিদা মতো ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর পরমার্শ দিয়েছিলেন। সেই সমীক্ষা করে কলকাতা–কেন্দ্রিক ৩৫টি রুটকে চিহ্নিত করে বাসের সংখ্যা ও ট্রিপ বাড়ানো হয়। এর মধ্যে আটটি নতুন রুট চালু করা হয়। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো অফিস টাইমে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গণপরিবহণের অবস্থা সরেজমিনে দেখব। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, মন্ত্রীর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম বৃহত্তর কলকাতা জুড়ে আটটি নতুন রুট চালু করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বাসের ট্রিপও। কিন্তু বাসের সংখ্যা বা ট্রিপ চাইলেই বাড়ানো সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত বাস ও চালক-কন্ডাক্টরেরও অভাব রয়েছে। অনেক চালক-কন্ডাক্টর অবসর নিয়েছেন। তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে না। সূত্রের খবর, শুধু সিএসটিসির জন্য চুক্তির ভিত্তিতে ৮৭৫ জন চালক–কন্ডাক্টর নিয়োগের প্রস্তাব গিয়েছিল। যা কোভিড কালে রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছিল।
তবে এখনও একজনকেও নিয়োগ করা যায়নি। তাই সিএসটিসির হাতে এই মুহূর্তে চালু ৬০০ বাস থাকলেও ৪০০–এর বেশি বাস পথে নামানো যাচ্ছে না। জ্বালানি ও অন্যান্য খরচ কয়েকগুণ বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি। তাই নিগমের আয়ও বাড়েনি।
রাজ্য সরকার আগে কর্মীদের বেতন দিত। চলতি আর্থিক বছর থেকে বেতনের ৯০ শতাংশ দিচ্ছে। বাকি টাকা এই স্বল্প আয় থেকে রক্ষণাবেক্ষণ–সহ অন্যান্য খরচ কমিয়ে মেটাতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমকেই। তাই বাস বাড়ালে অতিরিক্ত তেলের খরচ ও চালক-কন্ডাক্টারদের ওভারটাইমের টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়েও চিন্তা থাকছে।
পরিবহণ দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, গত সাত-আট বছরে কলকাতা–কেন্দ্রিক শতাধিক সরকারি রুটের অর্ধেক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোভিড কালের আগেও প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার সরকারি বাস চলত বৃহত্তর কলকাতায়। এক ধাক্কায় সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৭০০-তে। তা–ও বহু রুটে সরকারি বাস অনিয়মিত। পরিবহণ দপ্তরের হিসেবেই, কলকাতার রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে বেসরকারি বাস চলে চলে ৩ হাজার ৬১৫টি।
মার্চের মধ্যেই শহরের পথে চলা ১৫ বছরের পুরোনো বাতিল বাসের সংখ্যা দাঁড়াবে দেড় হাজার। কয়েক বছর আগেও কলকাতা লাগোয়া দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে মধ্যে বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন গড়ে বারোশো মিনিবাস পথে নামতে। এখন সেই সংখ্যাটা কমে দাড়িয়েছে ৪৫০–তে। কলকাতা থেকে রবীন্দ্র সেতু হয়ে হাওড়া স্টেশন ছুঁয়ে হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মধ্যে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের রুট ছিল ২০২টি। এ ক্ষেত্রেও অনেক রুটের পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গণপরিবহণে সঙ্কট কাটবে কী করে, সেটাই চিন্তার।
‘অল ইন্ডিয়া বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়, ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসে’র সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা, ‘মিনিবাস কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র স্বপন ঘোষরা বলছেন, ২০১৮ সালের পর থেকে সাধারণ যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে বাস ভাড়া কোনও ভাবে বাড়ানোর পক্ষপাতী নয় সরকার। সেই কারণে, অনেক বাস মালিকদের অনীহা চলে এসেছে নতুন বাস নামানোর। এই সমস্যা আগে মেটানো দরকার।