প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২০২২ সালের ২৩ জুলাই পার্থকে গ্রেপ্তার করে ইডি। গত ১ অক্টোবর ওই মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘শোন অ্যারেস্ট’ করেছিল আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। কেন এতদিন পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। যদিও গত ২৭ ডিসেম্বর এই মামলায় পার্থ এবং অয়ন শীল, সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ৪০ পাতার চার্জশিট পেশ করে সিবিআই।
পার্থর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়লেও রাজ্যপালের কনসেন্ট বা অনুমোদন না থাকায় তা নিম্ন আদালতে গ্রাহ্য হচ্ছিল না। শনিবার সিবিআই আদালতে জানায়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস প্রয়োজনীয় কনসেন্ট দিয়েছেন। এর পরই, চার্জশিট ও সিবিআইয়ের স্টেটাস রিপোর্ট গ্রহণ করে আদালত। এই মামলায় গত বছরের ১২ জানুয়ারি অভিযুক্ত পার্থ সেন এবং কৌশিক মাঝির বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। এজেন্সি সূত্রের খবর, প্রাথমিকের চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, পার্থ–সহ অভিযুক্তরা এক হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থীর থেকে টাকা নিয়েছেন!
প্রাথমিকে নিয়োগ মামলায় জামিন পেতে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষাকর্তা কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক সাহা, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং শান্তিপ্রসাদ সিনহা জামিনের আবেদন করেছিলেন। প্রথমে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মতভেদের জেরে তাঁদের জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলা যায় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে। গত ২৪ ডিসেম্বর ওই মামলায় পার্থ–সহ পাঁচ জনেরই জামিনের আবেদন খারিজ করেছিলেন বিচারপতি চক্রবর্তী। বিচারপ্রক্রিয়া বা চার্জগঠন শুরু করার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য ‘মৌন’ থাকতে পারে না বলেও পর্যবেক্ষণ ছিল বিচারপতি চক্রবর্তীর। অবশেষে পার্থর বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর জন্য কনসেন্ট দিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
গত বছরের শেষে প্রাথমিকে সিবিআইয়ের মামলায় জামিন চেয়ে দেশের শীর্ষ আদালতেও ভর্ৎসিত হতে হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাকি সবাই জামিন পেলে কেন পার্থ পাবেন না— তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জোর সওয়াল করেছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারপতি সূর্য কান্ত জানিয়েছিলেন, বাকিরা তো কেউ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন না! অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তুলনা করা উচিত নয়।
পার্থ–সহ প্রাক্তন সরকারি আধিকারিকরা সে কারণে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিনও পাননি। পার্থর সঙ্গে গ্রেপ্তার হলেও এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন তাঁর সহযোগিণী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ইডির মামলায় শর্তসাপেক্ষে পার্থর জামিনের ‘রাস্তা’ খুলে গেলেও, সিবিআইয়ের মামলায় এখনও জামিন অধরাই রয়েছে পার্থর। এরই মধ্যে রাজ্যপালের কনসেন্ট মেলায় কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়লেন জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী।
এই মামলায় আগামী ১৮ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্য দিকে, এ দিন ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর আইনজীবী জানান, মক্কেলের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সে কারণে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলায় ফের চার্জগঠন পিছিয়ে গেল।