• মেঘনাদ কে, খোঁজ নেই ৩ দিন পরেও
    এই সময় | ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, মালদা: তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার ওরফে বাবলার খুনে আততায়ীদের প্ল্যানের সঙ্গে অনেকেই মিল পাচ্ছেন মুম্বইয়ের এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির খুনের ঘটনার। অনেকে আবার এর সঙ্গে তুলনা টানছেন কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বরের কাউন্সিলার সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টার ঘটনারও। কারণ, ওই দু’টি ক্ষেত্রেই বেশ কয়েকদিন পরে জানা গিয়েছিল অপরাধীদের মোডাস অপারেন্ডি।

    ইতিমধ্যেই বাবলা খুনের ৬০ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত খুনের মোটিভ এবং মূল অভিযুক্তের হদিশ পায়নি পুলিশ। সেই আবহে নিহত তৃণমূল নেতার স্ত্রী চৈতালির বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। শনিবার তিনি বলেন, ‘জানি না কী হচ্ছে। মূলচক্রী কেন ধরা পড়ছে না? এই ঘটনায় একাধিক বড় মাথা যুক্ত রয়েছে বলেও আমার ধারণা।’

    জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘বাবলা সরকারকে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রেল কলোনি এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে খুন করার ছক কষে অপরাধীরা।’ যদিও পুলিশের যুক্তি মানতে রাজি নন চৈতালি। তাঁর কথায়, ‘সামান্য একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে ভাড়াটে খুনিরা প্ল্যান করবে, এটা অসম্ভব ব্যাপার। মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’ ফলে, বাবলা খুনের ঘটনায় পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে নেপথ্যে থাকা সেই ‘মেঘনাদ’কে।

    বৃহস্পতিবার খুনের ঘটনার পরে মোট তিনজন, এরপর শুক্রবার মধ্যরাতে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃত মহম্মদ সামি আক্তার এবং আব্দুল গনির বাড়ি বিহারে। বাকি তিন জন– টিঙ্কু ঘোষ, অভিজিৎ ঘোষ এবং অমিত রজকের বাড়ি ইংরেজবাজারের গাবগাছি, ঘোড়াপির এবং রেল কলোনি এলাকায়। ধৃত পাঁচ জনের বয়স ১৯ থেকে ২১–র মধ্যে। এদের মধ্যে অমিত হলেন এই ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন, বর্তমানে গা ঢাকা দিয়ে থাকা কৃষ্ণ ওরফে রোহনের ভাই।

    শনিবার উত্তরবঙ্গের আইজি রাকেশকুমার যাদব বলেন, ‘খুনের ঘটনায় দু’জন শুটার এবং সাহায্যকারী তিন জন সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে বিহারের কাটিহার থেকে ধরা হয়েছে। এই অপরাধের সঙ্গে আন্তঃরাজ্য গ্যাংয়ের যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।’

    জানা গিয়েছে, নিহত তৃণমূল কাউন্সিলারের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে কলোনিতে অমিত রজকের বাড়ি। দিদার মৃত্যুর পরে সেখানে থাকতেন অমিতের দাদা কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহন। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে বিহারের দুই পেশাদার শুটার আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। গত আট দিন ধরে সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেছেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে বিহারের দুই পেশাদার খুনির সঙ্গে ধৃত অমিতের দাদা কৃষ্ণ দেখা করতে আসতেন বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। অভিজিৎ এবং টিঙ্কু অমিতের বন্ধু।

    পুলিশ জানিয়েছে, রোহনের দিদার বাড়িটি আড়াই কাঠার উপরে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রেল কলোনি এলাকায় রাজ্য সড়কের ধারে। পুরোনো বাড়িতে জঙ্গল হয়ে গেলেও দাম অনেক। এই বাড়িটি কেনার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলার বাবলা নাকি কৃষ্ণকে এক সময়ে বলেছিলেন। শোনা যায়, বাড়ি বেচাকেনা নিয়ে কৃষ্ণর সঙ্গে দু’মাস আগে বচসাও হয় বাবলার।

    তবে শুধুমাত্র একটা পরিত্যক্ত বাড়ি কেনাবেচা নিয়ে দাপুটে নেতাকে খুন করা হবে, তাও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে রাজি নন পুলিশের কর্তারা। রেলওয়ে কলোনি এলাকার বাসিন্দা সুজাতা সরকার বলেন, ‘আমার পাশের ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে ২৫ ডিসেম্বর থেকে দুইজনকে দেখা যাচ্ছিল। কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা হওয়ায় জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওরা কারা? কৃষ্ণ উত্তর দেয়, বিহারের বন্ধু, ঘুরতে এসেছে মালদায়।’ পুলিশও আপাতত ভিনরাজ্যে পালানো কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহনকে মূলচক্রী হিসেবে মনে করছে।

    এই ঘটনায় ধৃত টিঙ্কুর আসল বাড়ি কালিয়াচকের বীরনগর এলাকায়। কুকীর্তির জন্য পরিবার তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর তিনি ইংরেজবাজার থানার মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসিমারি এলাকায় মামার বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে ছ’ মাস থাকার পরে মামার এক নাবালক ছেলেকে বিহারে বিক্রি করার সময়ে ধরা পড়ে জেলও খাটেন। সেই সুবাদে বিহারের দুই পেশাদার শুটারের সঙ্গে জেলে তাঁর যোগাযোগ হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।

    বছর খানেক আগে ছাড়া পেয়ে ইংরেজ বাজারের গাবগাছিতে দেড় হাজার টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে পেট চালাতে রাস্তার ধারে ঠেলাগাড়িতে চা বিক্রি শুরু করেন। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত টিঙ্কুকে এলাকায় আর দেখা যায়নি। চায়ের দোকানও বন্ধ ছিল।

  • Link to this news (এই সময়)