• স্বামী নেই, এ বার পোষ্য পুটুকে নিয়ে চিন্তায় চৈতালি
    এই সময় | ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    ভোর হলেই নিজের জায়গা ছেড়ে খাটে উঠে কম্বলের তলায় ঢুকে বাড়ির কর্তার সঙ্গেই শীতঘুম দিত চার বছরের পুটু। তারপর একটু গায়ে মাখামাখি, আদর নেওয়া এ সব চলত সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। তারপর গৃহকর্তা বাবলা সরকারের সঙ্গে ব্রেকফাস্ট। কখনও দুধমুড়ি, আবার কখনও সুস্বাদু খাবার। এই ছিল পুটুর সকালের রুটিন। বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছেন তৃণমূল নেতা বাবলা। তাঁর সেই পোষ্য জার্মান পাগ্ প্রজাতির পুটুকে নিয়ে এখন চিন্তায় পরিজনেরা।

    তিন দিন ধরে মালিককে দেখতে না–পেয়ে বড় উদাস, খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে কান্নার সুরও শোনা যাচ্ছে তার গলায়। বাড়ির এখানে সেখানে কী যেন শুঁকে বেড়াচ্ছে। কখনও গৃহকর্তার ঝোলানো কাপড় ধরে টানাটানি করছে। আবার কখনও ছাদে উঠছে বেলকনিতে যাচ্ছে। পেট ভরে পুটুকে এখনও পর্যন্ত বাড়ির অন্য সদস্যরা খাওয়াতে পারেননি।

    তৃণমূল নেতা বাবলার অবলা পোষ্যদের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল। শুধু বাড়ির পুটুকেই নয়, রাস্তার পথ কুকুরদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। ইংরেজবাজার শহরের সুকান্তপল্লি এলাকার বাড়িতেই রয়েছে পোষ্য পুটু। শুধু পুটুকুই একা নয়, বাড়ির সামনে আরও তিনটি পথ কুকুরও যেমন রয়েছে, এছাড়াও মহানন্দাপল্লি এলাকার বাবলা সরকারের প্লাইবোর্ডের কারখানা এবং কানিমোড় এলাকার পার্টি অফিসের সামনেও রয়েছে আরও বেশ কিছু পথকুকুর। যাদের দু’বেলা খাবার দিতেন বাবলা নিজেই।

    শনিবার মৃত ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুটু যেন তিনদিনেই ওজন কমিয়ে ফেলেছে। শুকনো মুখ, চোখের দুই পাশে জলের ধারা। বোঝা যাচ্ছে কাউকে না পেয়ে পুটু যেন উদাস। বাড়িতে কলিং বেল বাজলেই সোজা তিনতলা থাকে নেমে দরজার কাছে চলে আসছে। ভাবছে হয়তো মালিক ফিরেছেন। কিন্তু অন্য গলা শুনে পুটু আবার উদাস হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। এখন এই পুটুকে নিয়েই বড় চিন্তায় নিহত বাবলার স্ত্রী চৈতালি সরকার।

    তিনি বলেন, ‘চার বছরের বড় আদরের পুটুকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিল স্বামী। ও তিনদিন ধরে কিছুই খাচ্ছে না। দুটো বিস্কুট খেয়েছে কেবল। মাঝে মধ্যে জল খাচ্ছে। আর গোটা বাড়ি এ দিক সে দিক ছুটে বেড়াচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগছে, ওঁর ছবির সামনে কখনও গিয়ে বসে থাকছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’

    তাঁর সংযোজন, ‘কী করে বলি, পুটু তোর মালিক আর কোনও দিন ফিরে আসবে না। অবলা প্রাণী যতই হোক, কিছুটা তচো বুঝতে পারছে। ওর গতিবিধি দেখেই বুঝতে পারছি সেটা। না হলে ঘটনার তিন দিনের মধ্যে আমার আদরের পুটু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়? মাথায় এত চাপ তাই পুটুর সেবাযত্ন করছে ছেলে আর বাড়ির পরিচারিকা। তবুও খাচ্ছে না।’

  • Link to this news (এই সময়)