গত ২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ার কাছে নিজের প্লাইউড কারখানার সামনে খুন হন দুলাল। বাইকে চেপে এসে তিন জন দুষ্কৃতী দুলালকে লক্ষ্য করে পর পর গুলি করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে ফ্ল্যাট থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বের প্লাইউড কারখানায় দাঁড়িয়েছিলেন দুলাল। তখনই মোটরবাইকে চেপে তাঁকে তাড়া করে কয়েক জন দুষ্কৃতী। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে প্লাইউড কারখানায় পড়িমরি করে ঢুকে পড়ছেন দুলাল। আর তাঁর দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুড়ছে দুষ্কৃতীরা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, একটি গুলি দুলালের মাথার কাছে লাগে। সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু খুনের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত দু’জনকে এখনও ধরা যায়নি। পুলিশের অনুমান, রোহন এই খুনের অন্যতম মূলচক্রী। তিনি ঝলঝলিয়া রেলওয়ে ব্যারাক কলোনির বাসিন্দা। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন মহানন্দা কলোনি এলাকার বাসিন্দা বাবলুও। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই তাঁরা পলাতক। এই দু’জনের ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করে পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করেছে মালদহ জেলা পুলিশ।
দুলালের খুনের ঘটনায় আগেই বিহারের যোগ মিলেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুনের জন্য বিহার থেকে ‘শুটার’ ভাড়া করা হয়েছিল। পুলিশ এখনও পর্যন্ত যাঁদের গ্রেফতার করেছে তাঁদের মধ্যে দু’জন বিহারের বাসিন্দা।
দুলালের মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময়ে দুলাল তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে ছিলেন দুলাল। ১৯৯৫ সাল থেকে একটানা পুরভোটে জয়ী হয়েছেন। ইংরেজবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং জেলা তৃণমূল সহ-সভাপতি তিনি। প্রত্যাশিত ভাবেই মালদহের বাইরের রাজনীতিতে দুলালের (যিনি ‘বাবলা’ ডাকনামেই বেশি পরিচিত) তেমন কোনও পরিচিতি ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য তাঁকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ করে দিয়েছে। তাঁর খুনের খবরে মমতা বিচলিত হন। এই খুনের ঘটনায় নিজের অধীন পুলিশবাহিনীর একাংশকেই কাঠগড়ায় তোলেন মমতা। তাঁর ভর্ৎসনার পর পুলিশ আরও সক্রিয় হয়েছে। পর পর সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বার অন্যতম দুই মূল অভিযুক্তকে ধরতে পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করা হল।