• বাড়ি ফিরলেন রবি, সোনার ছেলেকে বরণ করে নিলেন গ্রামবাসীরা, ভালবাসায় আপ্লুত ফুটবলার
    আজকাল | ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাণ্ডববর্জিত গ্রামের বঙ্গতনয় এখন সকলের চোখের মণি। দীর্ঘ ছয় বছর পর কেরলের মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ৭৮তম সন্তোষ ট্রফি জিতেছে বাংলা। ফাইনালে বাংলার জয় এসেছে রবি হাঁসদার করা গোল থেকেই। রবিবার গ্রামে ফিরলেন বাংলার ছেলে। গ্রামবাসীদের আবেগ, ভালবাসায় আপ্লুত রবি।  সাঁওতালি রীতি মেনে তাঁকে বরণ করা হয়। ছিল ধামসা মাদল, আদিবাসী রমণীদের নৃত্য। রবির স্বাগত জানাতে শুধু মশারু গ্রামেরই নন, আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারাও হাজির হন।

    পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার মশারু গ্রামের আদিবাসীপাড়ায় বাড়ি রবির। বাবা সুলতান হাঁসদার স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন অনেক বড় ফুটবলার হয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। হৃদরোগের কারণে সেই কাজ সেরে ঋণ নিয়ে একটি টোটো কিনে ভাড়ায় খাটান সুলতান। মা তুলসী হাঁসদা জনমজুরি করে সংসার সামলে রেখেছেন কোনওরকমে। তবুও ছেলেকে মাঠে কাজ করতে পাঠাননি যাতে রবির অনুশীলনে ঘাটতি না হয়। কিন্তু ছেলের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি সুলতান। গত বছর জুন মাসে মারা যান তিনি। ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত তুলসী। তিনি বলেন, ''রবির একটি চাকরি হলে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি ঘটবে।''

    এক সময় রবির মা এক দিন কাজে না গেলে বাড়িতে হাঁড়ি চড়ত না। তুলসীদেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে রাসমণির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সাঁওতা বাসস্ট্যাণ্ডের কাছেই খেলার মাঠ। মুশারু আদিবাসীপাড়া মিলন সংঘ ক্লাবের এই মাঠেই ফুটবলচর্চা। রবির যখন ৬-৭ বছর বয়স তখন থেকেই  এই মাঠে ফুটবল খেলা শুরু। ১২ বছর বয়সে ভাতারে একাদশ অ্যাথালেটিক্স ক্লাবের ফুটবল কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করে দেওয়া হয় আর্থিক অনটনের মধ্যেই। তখন  থেকেই প্রশিক্ষণের শুরু।

    মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী তাঁর দলীয় কার্যালয়ে রবিকে সম্বর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করেন। সেখানে প্রচুর সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ে। আপ্লুত রবি বলেন, কল্যাণী থেকেই তাঁদের কোচ মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এবার চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। প্রতিটি ম্যাচই শক্ত। তাই কোনও ম্যাচই হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে না।'' বিধায়ক বলেন, ''গোটা গ্রাম নয় গোটা বাংলা রবির পাশে আছে।''

    উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলের ট্রায়ালে সুযোগ পেয়ে নির্বাচিত হন রবি। অধিনায়কের দায়িত্বও পেয়েছিলেন। ২০২২ সালে ন্যাশানাল গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা। সেই প্রতিযোগিতায় পাঁচ গোল করেছিলেন রবি। আর এবারের সন্তোষ ট্রফিতে সর্বোচ্চ গোলদাতাও সেই রবি। ফাইনাল ম্যাচ পর্যন্ত তাঁর করা গোলের সংখ্যা ১২। 
  • Link to this news (আজকাল)