নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: ‘বর্তমান’-এর খবরের জের। পিকনিকের দাপটে তিস্তাপাড়ের দূষণ রুখতে অবশেষে উদ্যোগী প্রশাসন। রবিবার সকালে আচমকা তিস্তার চরে হানা দেন জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার, পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার দেবদুলাল পাত্র, খড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান। পিকনিক করতে আসা মানুষজন যাতে প্লাস্টিকের গ্লাস কিংবা থার্মোকলের থালা বা অন্য সামগ্রী তিস্তার চরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখে না যান, সেব্যাপারে প্রত্যেকের কাছে আবেদন করেন মহকুমা শাসক। একইসঙ্গে তিস্তার চার নম্বর স্পারে ধমক দিয়ে ডিজে বক্স বন্ধ করান তিনি। কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, শব্দবিধি মেনে বক্স বাজাতে হবে। নতুবা বাজেয়াপ্ত করা হবে। মহকুমা শাসক বলেন, শীতে তিস্তায় প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে। যাতে কোনওভাবেই তাদের অসুবিধা না হয়, সেটা খেয়াল রেখে বক্স বাজাতে হবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিস ও স্থানীয় খড়িয়া পঞ্চায়েতকে নিয়মিত নজরদারি চালানোরও নির্দেশ দেন তিনি। যদিও প্রশাসনের আধিকারিকরা ফিরতেই তিস্তার চার নম্বর থেকে ন’নম্বর স্পার পর্যন্ত দেদার পিকনিকের বক্স বেজে চলে।
পিকনিকের দাপটে তিস্তার পাড় কার্যত নরককুণ্ড হয়ে উঠেছে। ৩ জানুয়ারি ওই দূষণের ছবি তুলে ধরেই খবর প্রকাশিত হয় ‘বর্তমান’-এ। ছবিতে ধরা পড়ে পিকনিক দলের ফেলে যাওয়া থার্মোকলের থালা, প্লাস্টিকের গ্লাস এবং মদের বোতল তিস্তার পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে দৃশ্যদূষণের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ ঘটছে। এরপরই দূষণ রুখতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান হয়। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ডাস্টবিন বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে যাঁরা তিস্তার পাড়ে পিকনিক করতে আসেন তাঁদের অভিযোগ, পানীয়জল ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়টিও পঞ্চায়েতকে দেখতে বলেন এসডিও। খড়িয়া পঞ্চায়েতের যাঁরা ভিলেজ রিসোর্স পার্সন (ভিআরপি) রয়েছেন, তাঁদের তিস্তার পাড়ে নজরদারি এবং সাফসুতরো করার কাজ চালাতে নির্দেশ দেন বিডিও।
খড়িয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনোজ ঘোষ বলেন, সোমবার থেকে আমরা তিস্তার পাড়ে ডাস্টবিন বসানোর কাজ শুরু করব। এক থেকে ন’নম্বর পর্যন্ত তিস্তার স্পারে পিকনিক হয়ে থাকে। প্রতিটি স্পারে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দু’টি করে অস্থায়ী শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ট্যাঙ্কের মাধ্যমে পানীয়জলেরও বন্দোবস্ত করছি আমরা।
পরিবেশ দূষণ রুখতে যারা তিস্তার পাড়ে পিকনিক করতে আসছেন, তারা যাতে থার্মোকলের থালার পরিবর্তে শালপাতার থালা ব্যবহার করেন, পঞ্চায়েতকে সেটাও দেখতে বলেন মহকুমা শাসক। - নিজস্ব চিত্র।