২০২২–এর ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এমন একটি মামলায় দানপত্রের সম্পত্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের নির্দেশ খারিজ করে ছেলের পক্ষে রায় দিতে বাধ্য হয়েছিল। বৃদ্ধ বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।
কারণ, তার আগে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টও দানপত্র করা সম্পত্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের ক্ষমতায় প্রশ্ন তুলেছিল। ওই মামলায় পরাজিত বৃদ্ধ বাবা বিশ্বনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষের কথা মাথায় রেখে বিচারপতি রায়ে উল্লেখ করেন, সম্পত্তি লিখে দিলে সন্তান কর্তব্য পালন করবে, এই আশা করবেন না। ২০২২–এর ২৮ ডিসেম্বর ‘এই সময়’ পত্রিকার প্রথম পাতায় ওই খবর প্রকাশ হয়েছিল, ছিল বৃদ্ধ–বৃদ্ধাদের জন্যে আর সতর্কবার্তা।
এই চিত্র অবশ্য শুধু এ রাজ্যের নয়। গোটা দেশেই বৃদ্ধ বাবা–মা স্নেহের বশে সন্তানকে জীবনের শেষ সম্বল লিখে দিয়ে তার পর ঘাড়ধাক্কা খাচ্ছেন, এমন নজির প্রচুর। এ বার সেই সহায়সম্বলহীন বৃদ্ধবৃদ্ধাদের খানিক স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সিটি রবিকুমার ও বিচারপতি সঞ্জয় করোলের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, এখন থেকে দানপত্র করে সন্তানকে সম্পত্তি দেওয়ার পরে শর্ত অনুযায়ী যদি সন্তান বাবা–মাকে না দেখেন তা হলে সেই দানপত্র বাতিল করতে পারবেন মহকুমাশাসক বা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল।
মধ্যপ্রদেশের এক বৃদ্ধা উর্মিলা দীক্ষিতের দায়ের করা মামলায় শীর্ষ আদালত এই রায় দিয়েছে। রায়ের ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, সিনিয়র সিটিজেনদের প্রতি বঞ্চনা হলে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যেই মহকুমাশাসকের হাতে ক্ষমতা দিয়েছে আইনসভা। সেই ক্ষমতা কাজে না লাগাতে দিলে ২০০৭ সালে যে ভাবনা থেকে সিনিয়র সিটিজেন আইন তৈরি হয়েছিল, সেটাই ধাক্কা খাবে।
২০২২–এ কলকাতা হাইকোর্টে হেরে যাওয়া বিশ্বনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের আইনজীবী জুঁই দত্ত চক্রবর্তী সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে যুক্তিতে মহকুমাশাসকের ক্ষমতা ব্যবহারের পক্ষে সায় দিয়েছে, আমরাও সে সময়ে একই যুক্তি দিয়েছিলাম। এতদিনে সেই আইন বাস্তবায়িত করার পক্ষে শীর্ষ আদালত রায় দিল। ফলে ভরণপোষণের শর্তে সম্পত্তি দানপত্র করে প্রতারিত হলে আগামী দিনে সিনিয়র সিটিজেন বাবা–মায়েরা মহকুমাশাসকের মাধ্যমেই জটিলতা এড়িয়ে দ্রুত এবং বাড়তি অর্থ খরচ না করে দান ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।’
সিনিয়র সিটিজেন আইনের ২৩ নম্বর ধারার উল্লেখে আগের দানপত্র খারিজের পক্ষে শীর্ষ আদালত বলেছে, সিনিয়র সিটিজেনদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্যেই ২০০৭ সালে আইন তৈরি হয়েছিল। ওই আইনের ২৩ নম্বর ধারা ব্যবহার না করতে দিলে বঞ্চনা হলে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের অধিকারও রক্ষা করা যাবে না।
কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত বলেন, ‘এই আইনের প্রয়োগে শীর্ষ আদালত আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে, দানপত্র করার সময়ে যদি শর্ত থাকে ভরণপোষণের, তবে সেই শর্ত মানা না হলে তা আইনি দোষে দুষ্ট হবে। এই রায়ের ফলে বহু বৃদ্ধবৃদ্ধা জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় সন্তানকে দানপত্র করে দিয়ে বঞ্চিত হলেও দ্রুত মতবদলের সুযোগ পাবেন।’