পাসপোর্ট কাণ্ড: সমরেশ যোগে এবার ‘ক্লোজড’ এক কনস্টেবল
বর্তমান | ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাসপোর্ট জালিয়াতিতে তদন্তকারীদের নজরে এবার সিকিউরিটি কন্ট্রোলের এক কনস্টেবল। অভিযুক্ত প্রাক্তন সাব-ইনসপেক্টর (এসআই) আব্দুল হাইয়ের ঘনিষ্ঠ ওই পুলিস কর্মীকে ইতিমধ্যেই ক্লোজ করা হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছে রিজার্ভ পুলে। একইসঙ্গে হেফাজতে থাকা আব্দুল হাইয়ের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। ওই টাকা আর এক অভিযুক্ত সমরেশ বিশ্বাসের অ্যাকাউন্ট থেকে ঢুকেছিল। এখান থেকেই তদন্তকারীরা নিশ্চিত যে নথি যাচাই না-করার বিনিময়েই এই টাকা রোজগার করেছিলেন প্রাক্তন ওই পুলিস কর্মী।
অভিযুক্ত প্রাক্তন এসআই সিকিউরিটি কন্ট্রোলে আসা পাসপোর্ট আবেদনের নথি যাচাইয়ের পাশাপাশি, তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে থানায় আসা আবেদনের নথিও নিজের হেফাজতে নিতেন। এরপর তিনি সেসব আপলোড করে দিতেন। জেরায় সমরেশ জানিয়েছে, কোন কোন আবেদনকারীর নথি যাচাইয়ের জন্য থানায় কপি গিয়েছে, তা আব্দুলকে জানিয়ে দিতেন তিনি। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় হাজির হয়ে সেখানে পাসপোর্টের নথি যাচাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার বা পুলিস কর্মীকে তিনি বলতেন, ওই আবেদনপত্রগুলি তাঁর ‘নিজের’ লোকের। তাই এই সংক্রান্ত কাগজপত্র নিজে যাচাই করবেন বলে থানার কাছ থেকে নিয়ে নিতেন। তবে কয়েকটি থানার অফিসার তাতে রাজি হননি। তাঁরা নথি যাচাই করতে গিয়ে দেখেন কিছু আবেদনকারীর ঠিকানার কোনও অস্তিত্বই নেই! ফলে তাঁরা ‘নেগেটিভ’ রিপোর্টই পাঠিয়ে দেন পাসপোর্ট অফিসে। সমরেশ আরপিও অফিসের কর্মীদের একাংশেকে ম্যানেজ করে সেই ফাইল আবার ওই প্রাক্তন অফিসারের কাছে পাঠান। আব্দুল নথি ‘ঠিক আছে’ বলে জানিয়ে পোর্টালে সমস্ত কিছু আপলোড করে দেন বলে অভিযোগ। এর বিনিময়ে আব্দুল টাকা পেয়েছে কি না তা জানতে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য বের করা হয়। দেখা যায়, একবছর ধরে আব্দুলের অ্যাকাউন্টে সমরেশের অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় মোট সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা ঢুকেছে। নথি যাচাই না-করার বিনিময়ে তিনি যে এই টাকা পেয়েছিলেন, তা গোয়েন্দাদের জেরায় স্বীকার করেন ওই প্রাক্তন এসআই। একইসঙ্গে তাঁর নামে-বেনামে কেনা সম্পত্তিরও হদিশ পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সেগুলি নিয়েও তাঁকে জেরা করা হচ্ছে।
তদন্তে প্রকাশ, আব্দুল হাই যখন সিকিউরিটি কন্ট্রোলে ছিলেন তখন তাঁর সহযোগী ছিলেন এক কনস্টেবল। আব্দুলের কাছে মাঝেমধ্যেই সমরেশ আসতেন। সেই সূত্র ধরে ওই কনস্টেবলের সঙ্গেও সমরেশের পরিচয় হয়। আব্দুল অবসর নেওয়ার পর ওই কনস্টেবল নথি যাচাইয়ের দায়িত্ব পান। আবেদনকারীদের লিস্ট ওই কনস্টেবলের মোবাইলে পাঠিয়ে দিতেন সমরেশ। সেগুলি যাচাইয়ের জন্য ওই কনস্টেবলের কাছে এলে তিনি কিছু না দেখেই পোর্টালে নথি আপলোড করে দিতেন । ওই কনস্টেবলের সঙ্গে সমরেশের একাধিকবার কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।