• ট্যাবের পরে আবাসের টাকাও হাপিশ সাইবার জালিয়াতদের!
    এই সময় | ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • বিশ্বরূপ বিশ্বাস, গোয়ালপোখর

    ‘তরুণের স্বপ্ন’–এর পরে এ বার কি আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা হাতানোর নতুন চক্র? আবারও কি সেই জালিয়াতির ভরকেন্দ্র উত্তর দিনাজপুর জেলা?

    এমনই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে উত্তর দিনাজপুর জেলার কয়েকটি জায়গায়, বিশেষ করে গোয়ালপোখরে বেশ কয়েকজন আবাস উপভোক্তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাপিশের ঘটনা সামনে আসার পরে। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আবাস উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রথম দফায় গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা করে জমা পড়ার কথা।

    গোয়ালপোখরের বেশ কয়েকজন আবাস উপভোক্তার অভিযোগ, সম্প্রতি তাঁরা টাকা তুলতে গিয়ে দেখেছেন, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে একলপ্তে বা কয়েক দফায় সেই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। গোয়ালপোখর–১ ব্লকের বিডিও কৌশিক মল্লিক এবং ইসলামপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার ডেন্ডুপ শেরপা দু'জনেই রবিবার জানিয়েছেন, তাঁরা এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাননি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।

    তা হলে টাকা হাতানোর বিষয়টি উঠে এল কী ভাবে?

    গোয়ালপোখর–১ ব্লকের বেশ কয়েকজন আবাস উপভোক্তা জানিয়েছেন, গত ক’দিনে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেআইনি বাবে প্রতারকরা তুলে নিয়েছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এই ব্লকের অন্তর্গত পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারপাড়া, শান্তিনগর ও নতুনপাড়া ভোতর গ্রামের ন’জন উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কারও ২০ হাজার, কারও ২১ হাজার ৯০০, আবার কারও ২৬ হাজার ৯০০ টাকা গায়েব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

    পাঞ্জিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাসের কথায়, ‘২২ ডিসেম্বর স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আমাকে ফোন করে জানান, আমার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কি না, তা ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখে নিতে। আমি ২৩ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি, আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা আমার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ২৭ ডিসেম্বর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা তুলি। তার ক'দিন পরে ফের টাকা তুলতে গিয়ে দেখি, মাঝের কয়েক দিনে ১০ হাজার, ৯ হাজার ৯০০ এবং ৭ হাজার ৭০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কোনওরকমে ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চলে। অনেক আশা করেছিলাম, সরকারি অনুদানের টাকায় একটা পাকা বাড়ি তুলব। এখন কী হবে?’

    তিনি জানান, ইসলামপুর পুলিশ জেলার সাইবার ক্রাইম থানা ও ব্যাঙ্কে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর কথায়, ‘টাকাটা না–পেলে তো বাড়ির ভিতও তুলতে পারব না।’ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই শান্তিনগরের বাসিন্দা ভারতী বিশ্বাস নামে এক গৃহবধূ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘২৬ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি আমার অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা ঢুকেছে। ১ জানুয়ারি টাকা তুলতে গিয়ে দেখি, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ২১ হাজার ৮০০ টাকা আমার অজান্তে কে বা কারা তুলে নিয়েছে। আমার সন্দেহ হওয়ায় অ্যাকাউন্টে ২০০০ টাকা রেখে বাকি সব টাকাই তুলে নেই। শনিবার ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখি, সেই দু'হাজার টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)