বেঙ্গালুরু বা অন্য কোনও রাজ্যে নয়। খাস কলকাতাতেই ধরা পড়েছিল হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (HMPV) সংক্রমণ। সেটাও গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। মাত্র পাঁচ মাসের এক শিশুর শরীরে ধরা পড়েছিল এই সংক্রমণ। চিকিৎসা পরে সুস্থ হয়ে উঠেছিল ওই শিশু। HMPV নিয়ে এত আতঙ্কের কি কোনও ভিত্তি রয়েছে? শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগটি কতটা বিপদের? বাবা-মা কখন সতর্ক হবেন? সংক্রমণ হলে কী কী চিকিৎসা রয়েছে? পিয়ারলেস হাসপাতালের শিশুরোগ বা পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান ডাক্তার সহেলি দাশগুপ্তের সঙ্গে আলোচনায় ‘এই সময় অনলাইন।’
২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর HMPV পজিটিভ ধরা পড়ে ওই শিশুর। চিকিৎসক সহেলি দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, মাস পাঁচেকের ওই শিশু বাবা-মায়ের সঙ্গে মুম্বই থেকে কলকাতায় এসেছিল। এই শহরে আসার পরে তার ধুম জ্বর হয়। বমি, শ্বাসকষ্টের মতো আরও নানা উপসর্গ ছিল। সেগুলি দেখেই অনেকগুলি পরীক্ষার সঙ্গে এইচএমপিভি টেস্টও হয়েছিল। কিন্তু করোনা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনো, অ্যাডিনো, রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস ইত্যাদি টেস্ট নেগেটিভ এলেও এইচএমপিভি টেস্ট পজ়িটিভ আসে।
এতটাই তীব্র শ্বাসকষ্টে ওই শিশু ভুগছিল যে তাকে PICU তে ভর্তি করানো হয়। ব্রিদিং সাপোর্ট দেওয়া হয়। হাই-ফ্লো নেজ়াল ক্যানুলার (High Flow Nasal Cannula) মতো চিকিৎসা দেওয়া হয়। সহেলি জানাচ্ছেন, এটা নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের মতো একটি বিষয়, শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত সমস্যার উপশম হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। PICU-তেই ৭ দিন ছিল ওই শিশু। তারপরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।
HMPV সংক্রমণের চিকিৎসা কী?
হিউম্যান মেটা নিউমোভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে এখনও কোনও অ্যান্টি ভাইরাল চিকিৎসা নেই। মূলত উপসর্গের চিকিৎসা হয় এই রোগের ক্ষেত্রে। এইচএমপিভি-র সাধারণ উপসর্গ একেবারেই মামুলি সর্দি-কাশি-জ্বর। বাড়াবাড়ি হলে নানা ধরনের ব্রিদিং সাপোর্ট দিয়ে এর চিকিৎসা হয়। সময়ে রোগ চিনতে পারা এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরুই রোগমুক্তির উপায় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। গলা ও নাকের সোয়্যাব নিয়ে একটি বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে HMPV সংক্রমণ রয়েছে কিনা তা জানা যায়।
HMPV কি একেবারেই নতুন?
চিকিৎসক সহেলি জানাচ্ছেন, এর আগেও এমন সংক্রমণের ঘটনা দেখা গিয়েছে। মূলত বাচ্চারা এই ভাইরাসের সংক্রমণে বেশি বিপদের মুখে পড়তে পারে। তার কারণও রয়েছে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে সংক্রমণ কতটা মারাত্মক হবে। একেবারে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কম হয়। এর ফলেই যে কোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। পাঁচ মাসের এই শিশুর ক্ষেত্রেও বিষয়টা তেমনই হয়েছিল বলে তিনি জানাচ্ছেন।
সতর্ক থাকবেন কী ভাবে?
শিশুদের আকছার জ্বর হয়। বিশেষ করে ঋতুবদলের সময় ঘনঘন সর্দিকাশি ও জ্বরে ভোগে অনেক শিশুই। হিউম্যান মেটা নিউমোভাইরাস সংক্রমণের আবহে তাই জ্বর ও সর্দি নিয়ে প্রবল আতঙ্ক ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। চিকিৎসক সহেলি দাশগুপ্ত বলছেন, ‘আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি। জ্বরের সঙ্গে অন্য উপসর্গ রয়েছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি জানাচ্ছেন, শিশুর টানা হাই গ্রেড ফিভার হলে, টানা কাশি হলে সতর্ক হতে পাবে। যদিও জ্বরে আক্রান্ত শিশুর বমি হয়, একেবারেই খেতে না পারে তাহলে দ্রুত সতর্ক হয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।