এই অবস্থায় গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা যে সুনিশ্চিত করতে হবে, সে কথা মাথায় রেখে নতুন বছরের শুরুতেই সুন্দরবনের নদ–নদী এবং বঙ্গোপসাগরে কড়া নজরদারি শুরু করল সুন্দরবন পুলিশ জেলার সব ক’টি উপকূল বা কোস্টাল থানার পুলিশ।
শনিবার দিনভর ফ্রেজারগঞ্জ থানার পুলিশকর্মী ও অফিসাররা সুন্দরবনের খাঁড়ি, নদ–নদী এবং বঙ্গোপসাগরে দ্রুত গতির নৌকো এফআইবি (ফাস্ট ইন্টারসেপ্টর বোট)–তে করে নজরদারি চালান। স্পিড বোটের ওই টহলদার–দলে ছিলেন ফ্রেজারগঞ্জ থানার ওসি ঋদ্ধি সরকারও। বঙ্গোপসাগরের গভীরে জম্বুদ্বীপের কাছাকাছি মৎস্যজীবীদের একটি ট্রলার আটকে পুলিশ সেখানকার মৎস্যজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
সেই সঙ্গে নিবিড় তল্লাশি। মাছ ধরার আড়ালে ট্রলারে আপত্তিকর কোনও বস্তু বা নাশকতা ঘটানোর কোনও বিপজ্জনক সরঞ্জাম রাখা কি না, সে কথা মাথায় রেখে পুলিশ তল্লাশি চালায়। পুলিশি অভিযানে এ দিন সমুদ্রের গভীরে নজরদারি চালাতে দূরবীন ব্যবহার করা হয়েছে।
সুন্দরবন ও তার আশপাশেই রয়েছে ভারত–বাংলাদেশ একাধিক জল সীমান্ত। জলপথে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশের তরফে কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোকে।
এ দিনগভীর সমুদ্রে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির মুখোমুখি হওয়া মৎস্যজীবী সুখেন বলেন, ‘সমুদ্রে আমরা মাছ ধরছিলাম। হঠাৎই আমাদের ট্রলারের পাশে পুলিশের একটা স্পিডবোট এসে দাঁড়াল। তার পরেই ট্রলারে থাকা আমাদের— মৎস্যজীবীদের সবার পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে দেখলেন পুলিশ অফিসাররা। ট্রলারে আমরা কোনও বেআইনি বস্তু রেখেছি কি না, সেটাও তল্লাশি করে দেখা হয়েছে।’
সুখেনের সংযোজন, ‘তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ অফিসাররা সন্তুষ্ট হওয়ার পর চলে যাওয়ার আগে আমাদের, মৎস্যজীবীদের সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন। ওঁরা বলেছেন, সমুদ্রে বিদেশি ট্রলার বা বার্জ দেখলেই আমরা যেন পুলিশকে খবর দিই।’
ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানার ওসি ঋদ্ধি সরকার বলছেন, ‘এমনিতে সমুদ্রে পুলিশের আওতায় থাকা এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। সামনে গঙ্গাসাগর মেলা, তাই জলপথে আমাদের ২৪ ঘণ্টা টহলদারি চলছে।’ তাঁর সাফ কথা, ‘সুন্দরবনের উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে সুন্দরবন পুলিশ বদ্ধপরিকর। এখন প্রবল ঠান্ডা। কিন্তু সে সব ভাবার সময় আমাদের নেই।’
প্রশাসন সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় সুন্দরবন এলাকার আন্তর্জাতিক জল সীমান্ত প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। বঙ্গোপসাগরের ভারত–বাংলাদেশ জল সীমান্তে বছরভর উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নৌসেনার নজরদারি তো থাকেই। পাশাপাশি, সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকেও বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের নদ–নদীতে এফআইবি দিয়ে সার্চিং অপারেশন ও প্যাট্রোলিং চলে।
কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে জলপথে ও পার থেকে অনুপ্রবেশ রুখতে রায়দিঘি, গোবর্ধনপুর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ ও সাগরদ্বীপে সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশের প্যাট্রোলিং আরও জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে মৎস্যজীবী ট্রলারগুলোয়। এমনকী, মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্র, লাইসেন্স–ও এখন অনুপুঙ্খ ভাবে দেখছে পুলিশ। জলপথে অচেনা, অদ্ভুত, অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লেই ভারতীয় মৎস্যজীবীরা যাতে পুলিশকে খবর দেন, সেটা তাঁদের বোঝানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে, গঙ্গাসাগর মেলার জন্য এ বার সুন্দরবনে জলপথের নিরাপত্তা বেড়েছে গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ কয়েক গুণ। উপকূলরক্ষী বাহিনী, নৌসেনা, বিএসএফের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে সুন্দরবন পুলিশ এই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কাজ চালাচ্ছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও নলাভাট বলেন, ‘এ বছর গঙ্গাসাগর মেলার সময়ে ১২ হাজার পুলিশকর্মী ও অফিসার মোতায়েন করা হবে। কড়া নজরদারি চালানো হবে জলপথে।’