• পড়ুয়া নেই, ২৫ প্রাথমিক স্কুল বন্ধ হচ্ছে হাওড়ায়
    এই সময় | ০৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • মহম্মদ মহসিন

    হাওড়া জেলায় ২০৫৯টি প্রাথমিক স্কুল আছে। কিন্তু প্রায় ২৫টি স্কুলে পড়ুয়া নেই বললেই চলে। ওই স্কুলগুলি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে হাওড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদ। ওই সব স্কুলগুলির শিক্ষক–শিক্ষিকাদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই স্কুলগুলো বেশির ভাগই শহর এলাকায়। ভাড়াবাড়িতে ওই স্কুলগুলি চলত।

    তাই স্কুলগুলি সংস্কার করা সম্ভব হতো না। এ দিকে, ভাঙাচোরা স্কুলে অভিভাবকরা ছোটদের পাঠাতে ভয় পান। পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ না হওয়ায় তারাও স্কুলে আসতে চায় না। ফলে স্কুলগুলিতে ধীরে ধীরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে শুরু করে।

    এক কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি প্রাথমিক স্কুল জগৎবল্লভপুর ব্লক এলাকায়। কোনওটিতেই পড়ুয়া নেই। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ শিক্ষক–শিক্ষিকারা। এই দু’টি স্কুলের শিক্ষকরা এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। সরকারি স্কুলের সুযোগ সুবিধার কথা তাঁরা মানুষকে বোঝাচ্ছেন। জেলায় আরও কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। সেগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা হাজারের বেশি। এর মধ্যে ইংরেজি মাধ্যম ও ওডিয়া মাধ্যম স্কুলও আছে।

    অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, বেশ কিছু সরকারি স্কুলে শিক্ষকদের সংখ্যাও কম। ফলে ঠিকঠাক পড়াশোনা হয় না। কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ হাওড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘এক একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা দশ থেকে পঞ্চাশের নীচে। আবার কোথাও বেশি। আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি যে স্কুলগুলো হাইস্কুলের আশেপাশে, সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি। কারণ, প্রাথমিক স্কুল পাশ করে পড়ুয়ারা হাইস্কুলে পড়তে যায়।’ তিনি বলেন, ‘যে সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি, সেখানে এই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বদলি করার কাজ শুরু হয়েছে। তার পর স্কুলগুলি বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

    এমনই একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি ঢ্যাং বলেন, ‘আমরা প্রচার করায় সন্তোষবাটি ধর্মতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে তিনজন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছে। আগের বছর ১৫ জন ছিল। এ বার ১৮ জন হলো। বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান স্কুলে করা হচ্ছে। পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আর্জি জানিয়ে পদযাত্রাও হয়।’

    উলুবেড়িয়া উত্তর চক্রের অধীনে বুড়িখালি পূর্ব প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে গেলে শিক্ষকদের বড় ভূমিকা পালন করতে হয়। তাঁদের স্কুলে এখন ২০০ জন পড়ুয়া আছে। শ্যামল বলেন, ‘পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে আমরা মরশুমি ফুল–ফলের চাষ করছি। স্কুলে কিচেন গার্ডেন করা হয়। সেই সব্জি মিড-ডে মিলের মেনুতেও থাকে। ছোটদের বৃক্ষরোপণ থেকে গাছের যত্ন শেখানো হয়। দৈনিক ৯০ শতাংশ ছাত্র স্কুলে উপস্থিত থাকে।’

    তাঁদের মতে, ওই ২৫টি স্কুলও যদি চেষ্টা করত পড়ুয়ার সংখ্যা ধরে রাখতে পারত। এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘আগে যেমন স্কুলগুলিতে পরিদর্শক মাঝেমধ্যেই পরিদর্শনে আসতেন, এখন তার খামতি দেখা যাচ্ছে। বিদ্যালয় পরিদর্শকরা পরিদর্শন করতে এলে ভালো হয়।’

  • Link to this news (এই সময়)