আজকাল ওয়েবডেস্ক: বহরমপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নির্দেশে সোমবার খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম ‘মাস্টার মাইন্ড’ তারিকুল ইসলাম ওরফে সুমনকে নিজেদের হেফাজতে পেল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। শনিবারে এসটিএফ-এর তরফে তারিকুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য বহরমপুর আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। সিজেএম আদালতে সেই আবেদনের ভিত্তিতে শুনানির পর বিচারক তারিকুলকে সাত দিনের এসটিএফ হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি ফের তরিকুলকে আদালতে পেশ করা হবে।
অন্যদিকে, তারিকুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য অসম পুলিশের এসটিএফ এদিন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সকালবেলায় পৌঁছে যায়। অসম পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিককে নিজের সার্ভিস রিভলভার জেলের বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকতেও দেখা যায়। তবে অসম পুলিশের আধিকারিকেরা বহরমপুর সংশোধনাগারে পৌঁছনোর আগেই রাজ্য পুলিশের এসটিএফ তাকে সেখান থেকে বার করে বহরমপুর আদালতের জন্য নিয়ে চলে এসেছিল।
সূত্রের খবর, অসম এসটিএফ আদালতের নির্দেশ নিয়ে তারিকুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদে এসেছিল। কিন্তু রাজ্য পুলিশের এসটিএফ পৃথকভাবে তারিকুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য যে আবেদন করতে চলেছে তা অসম পুলিশের জানা ছিল না। তবে বহরমপুর আদালতে আজ অসম এসটিএফ-এর পক্ষ থেকে তারিকুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য পৃথকভাবে কোনও আবেদন করা হয়নি।
অসম পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে তাদের হেফাজতে যে সমস্ত এবিটি-র জঙ্গিরা রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সেই সূত্রে তারিকুলকে এবিটি-র জঙ্গিদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার প্রয়োজন ছিল। সেই সুযোগ না মেলায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে 'অপারেশন প্রঘাত' কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
বহরমপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী বিশ্বপতি সরকার বলেন, 'এসটিএফ হেফাজতে থাকা দু' জন ব্যক্তির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যার ভিত্তিতে এসটিএফ-এর তরফ থেকে আজ আদালতে তারিকুলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। আগামী ১৩ জানুয়ারি তারিকুলকে ফের আদালতে পেশ করা হবে।‘সরকারি আইনজীবী আরও জানান, 'তারিকুলের বিরুদ্ধে বিএনএসের ১১৩ (২), (৩), (৪)-সহ আরও একাধিক ধারায় বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে এসটিএফ-এর পক্ষ থেকে। তারিকুলকে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করে নতুন তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।'
এসটিএফ সূত্রের খবর, বছর সাতেক আগে পকশো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে হরিহরপাড়ার বাসিন্দা জনৈক আব্বাস আলী বহরমপুর জেলে বন্দি ছিলেন। সেই সময় আব্বাসের সঙ্গে তরিকুলের পরিচয় হয়। সম্প্রতি এবিটি-র জঙ্গি সন্দেহে অসম পুলিশের এসটিএফ-এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে আব্বাস এবং মিনারুল শেখ নামে দুই যুবক। দু'জনের বিরুদ্ধেই এবিটি-র সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা এবং নাশকতামূলক কাজের পরিকল্পনা করার অভিযোগ রয়েছে। আব্বাস নিজের পিসতুতো ভাই সাজিবুলের মাধ্যমে এবং জনৈক মোস্তাকিমের সহযোগিতায় নওদা থানা এলাকাতেও সংগঠন বাড়ানোর কাজ করছিল বলে জানা গিয়েছে। অসম ও রাজ্য এসটিএফ-এর যৌথ অভিযানে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে সাজিবুল এবং মোস্তাকিম।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, হরিহরপাড়ায় আব্বাস যে মাদ্রাসাতে কাজ করতেন তারিকুলের নির্দেশে সেখানে 'জিহাদী' কাজের জন্য ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর কাজ শুরু হয়েছিল। কেরল থেকে ধৃত এবিটি-র জঙ্গি নেতা মহম্মদ সাব শেখ এবং অসম থেকে ধৃত নূর মহম্মদের মাধ্যমে বাংলাদেশি জঙ্গিদের কাছে নির্দেশ পৌঁছতো বলে জানা গিয়েছে। এদের সকলের সঙ্গে তরিকুলের কী সম্পর্ক ছিল এবং কীভাবে সে নতুন করে সংগঠন বিস্তারের পরিকল্পনা করেছিল তা খতিয়ে দেখছে এসটিএফ।