আমাদের মৎস্যজীবীদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে বাংলাদেশ, ক্ষোভ উগরে দিলেন মমতা
বর্তমান | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
কৌশিক ঘোষ, গঙ্গাসাগর: ইউনুস জমানার বাংলাদেশে এখন একবগ্গা ভারত বিদ্বেষের রমরমা। ‘ভারত-প্রেমী’ বলে দেগে দিয়ে সেখানকার সংখ্যালঘুদের একাংশের উপর অত্যাচার বেড়ে চলেছে। প্রতিবেশীর এমন আস্ফালনে জলঘোলা হচ্ছে এপারেও। তার মধ্যেই বাংলাদেশ নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সাগরদ্বীপে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। ভুল করে বাংলাদেশের জল-সীমানায় ঢুকে পড়ায় রাজ্যের বেশ কয়েকজন মৎস্যজীবীকে আটক করেছিল বাংলাদেশ। এদিন সাগরদ্বীপে ফিরে আসা সেই মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁদের ধরার পর প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ভারতের জল-সীমানা অতিক্রম করলে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদেরও একইভাবে আটক করা হয়। কিন্তু তাঁদের মারধর তো দূরের কথা, সবসময় ভালো ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কয়েকজন অসুস্থ বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে সাগরদ্বীপ পৌঁছেই বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা ৯৫ জন মৎস্যজীবীর জন্য রাজ্য সরকার আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা। মঞ্চে ওঠার আগে তিনি মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের শুভেচ্ছা জানান। ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওঁরা কয়েকজন খোঁড়াচ্ছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করায় প্রথমে কিছু বলতে চাননি। পরে জানালেন, তাঁদের হাত-পা বেঁধে মোটা লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে।’ আহত মৎস্যজীবীদের অর্থোপেডিক ডাক্তার দিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে ১০ হাজার টাকা করে সাহায্যের চেক ও কিছু উপহার তুলে দেন তিনি। গুণমন দাস নামে এক মৎস্যজীবী বাংলাদেশের জল-সীমানার মধ্যে পড়ে যান। এখনও তাঁর খোঁজ মেলেনি। তাঁর স্ত্রী পুতুল দাসকে এদিন ২ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মমতা। প্রসঙ্গত, ‘অভিজিৎ’ নামে একটি ট্রলারের সঙ্গে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজের ধাক্কা লাগলে পাঁচজন জলে পড়ে যান। চারজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও গুণমন দাসকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ধরা পড়ার পর বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনী তাঁদের মারধর করে। তবে গত দু’মাস খুলনার বাগেরহাট জেলে বন্দি অবস্থায় কোনও অত্যাচার হয়নি বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। মোট ছ’টি ট্রলারের মৎস্যজীবীদের আটক করেছিল বাংলাদেশ। ট্রলারগুলিও ফেরত দেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবী লিটন দাস, শ্রীকান্ত পাড়ি, সমর দাসরা আরও জানান, ধরা পড়ার পর মারধরের পাশাপাশি ভারতবর্ষের নামে নানা কুকথাও বলা হয়েছে তাঁদের সামনে। মোবাইল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সমরবাবু বলেন, ‘আমাকে এমন মারধর করা হয় যে জেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। জেলে খাবারের মান খুব খারাপ ছিল। শীতের জন্য কোনও পোশাক দেওয়া হয়নি।’ রাজ্য সরকার তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলে জেল কর্তৃপক্ষ কিছুটা ভালো ব্যবহার করে বলে জানান তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, ‘অনেক কষ্ট ও চেষ্টা করে বাংলাদেশ থেকে মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে সতর্ক থাকতে হবে, কেউ যেন আবার বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকে না পড়েন। এতে কিছুটা কম মাছ পাওয়া গেলে যাক।’ মৎস্যজীবীদের রাজ্য সরকারের তরফে বিশেষ পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য তাঁদের খুঁজে পেতে সুবিধা হয়েছে বলেও মনে করেন মমতা। ঘরে ফিরে আসা মৎস্যজীবীরাও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।