কর্মক্ষেত্রের ২০ কিমির বাইরে সরকারি ডাক্তারদের প্র্যাকটিস নয়, কড়া নির্দেশ স্বাস্থ্যদপ্তরের
বর্তমান | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘প্রতি বৃহস্পতিবার করে বিকেল ৪টে থেকে রোগী দেখবেন পিজি হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ...। এই মোবাইল নম্বরে ফোন করে নাম লেখান দ্রুত।’ শুধু কলকাতা নয় দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, মালদহ, শিলিগুড়ি—রাজ্যের সর্বত্র এমন সাইনবোর্ডের দেখা মেলে। পরিযায়ী সরকারি চিকিৎসকদের দৌলতে বেশ কিছু জেলা সদরকে এখন মজা করে ‘নার্সিংহোম নগর’ বলে ডাকেন অনেকেই। বিষয়টি আর বরদাস্ত নয়—এবার তা স্পষ্ট করল রাজ্য সরকার। নতুন বছরের প্রথম সোমবারে স্বয়ং স্বাস্থ্যসচিব সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিলেন, কর্মস্থল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের বাইরে আর প্র্যাকটিস করতে পারবেন না সরকারি ডাক্তাররা। মেডিক্যাল কলেজগুলি সহ রাজ্যের ২৮টি সরকারি ডাক্তারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আরও ১৪০০ সরকারি হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কমর্রত চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে এই নির্দেশ। এর আওতায় আসবেন প্রায় ১৩ হাজার সরকারি ডাক্তার।
নির্দেশনামায় সাফ জানানো হয়েছে, এরপর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে চাইলে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) নিতেই হবে। এছাড়া জেলায় জেলায় বহু সরকারি চিকিৎসকের আবাসনের সামনে রোজই দেখা যায় রোগীদের লম্বা লাইন। নিয়মকে কাচকলা দেখিয়ে সরকারি কোয়ার্টারে চলে সমান্তরাল আউটডোর (পড়ুন চেম্বার)। লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করা সেই চিকিৎসকদেরও এদিন কড়া বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। সাফ জানানো হয়েছে, সরকারি আবাসনে কোনওভাবেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা যাবে না।
বিষয়টি নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি বাম চিকিৎসক সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর অন্যতম শীর্ষ নেতা ডাঃ মানস গুমটা। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক পদস্থ কর্তার অবশ্য দাবি, এটা নতুন কিছু নয়। সরকারি নিয়ম ছিলই। চিকিৎসকরা দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাইছিলেন। সেই লক্ষ্যেই সরকারের এই পদক্ষেপ বলে নবান্ন সূত্রে খবর। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, চিকিৎসকরা এই নির্দেশ মেনেই চলবেন।’
দপ্তর সূত্রে খবর, ‘প্র্যাকটিস করি না’—একথা লিখিতভাবে জানিয়েও সরকারি ডাক্তারদের একাংশ লুকিয়ে চুরিয়ে চেম্বার চালান। পাশাপাশি মূল বেতনের ১৫ শতাংশ ‘নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স’ হিসেবে পকেটস্থও করেন। সিনিয়র পদভেদে সেই টাকার অঙ্ক মাসে ১৬ থেকে ২২ হাজার টাকা! অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, প্যাথোলজি, ফার্মাকোলজি ও অন্যান্য শাখার শিক্ষক চিকিৎসকদের প্রায় সকলেই ‘নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাউন্স’ নেন। কিন্তু এঁদেরও অন্তত ২০-৩০ শতাংশ চুটিয়ে রোগী দেখেন। আর মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থো, শিশুরোগ সহ ক্লিনিক্যাল বিষয়ের শিক্ষক চিকিৎসকদের ৮০-৯০ শতাংশই ওই ভাতা নেন না। প্র্যাকটিস করেন। আর অধিকাংশই তা করেন ডিউটি টাইমে। আর কর্মক্ষেত্রের ২০ কিমির মধ্যে প্র্যাকটিস? সে নিয়ম সোনার পাথরবাটি!