• অস্তিত্বহীন ঠিকানায় পাসপোর্টের আর্জি, বুদ্ধি দেন প্রাক্তন এসআই
    বর্তমান | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঠিকানা উত্তর কলকাতার।  অথচ পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা পড়েছে আমতা পোস্ট অফিসের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র থেকে। সেখান থেকে ইস্যু হয়েছে ৭৫টি পাসপোর্ট। কলকাতা পুলিসের সিকিউরিটি কন্ট্রোলের (এসসিও) প্রাক্তন সাব ইনসপেক্টর আব্দুল হাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই রহস্যের জট খুলেছে। পুরোটাই যে ওই অবসরপ্রাপ্ত সাব ইনসপেক্টরের ছকে দেওয়া, সে বিষয়ে নিশ্চিত তদন্তকারীরা।  কলকাতার যে ঠিকানাগুলি দেখিয়ে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলির কোনও অস্তিত্বই মেলেনি।


    আব্দুল হাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পারছেন সমরেশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল অশোকনগরে। এরপর তার বাড়িতে যাতায়াত শুরু হয়।  তিনি জানতে পারেন, সমরেশ ভুয়ো নথি তৈরির কারবার রয়েছে। এই নথিগুলি কলকাতায় বসে তৈরি করছে মনোজ গুপ্তা। সমরেশ তাঁকে টোপ দেয়, অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট করিয়ে দিলে ভালো টাকা রোজগার করা যাবে। তদানীন্তন এসসিও’র ওই অফিসার জানায়, তাঁর হাতে কলকাতা পুলিসের উত্তর ডিভিশনে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের নথি যাচাইয়ের দায়িত্ব রয়েছে। তাই সমরেশকে বুদ্ধি দেয়, আবেদনকারীদের ঠিকানা উত্তর কলকাতার করতে হবে। তাঁর পরামর্শমতো, মনোজ ও সমরেশ মিলে চিৎপুর, কাশীপুর, সিঁথি ও মানিকতলার বিভিন্ন থানা এলাকার ঠিকানা দেখায়। অবসরপ্রাপ্ত অফিসার পরামর্শ দেন, যেহেতু পাসপোর্টের আবেদন যে কোনও জেলা থেকে করা যায়, তাই কলকাতার বাইরে কোন এলাকা থেকে তা করা হোক।  কারণ কলকাতার কোনও পিএসপিও তে আবেদন জমা পড়লে সেক্ষেত্রে নথি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে সমস্যা বাড়বে। নথিতে ঠিকানা কলকাতার হওয়ায় আবেদনকারীর সমস্ত কিছু তাঁর কাছেই আসবে। তাই জেলার কোনও পাসপোর্ট কেন্দ্র থেকে আবেদন করা হলেও, পুলিস ক্লিয়ারেন্স পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। 


    সমরেশ জেরায় তদন্তকারীদের জানিয়েছে, তার সঙ্গে আমতা পোস্ট অফিসের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের এক কর্মীর পরিচয় ছিল।  তাঁকে দিয়ে সমস্ত নথি আপলোড করায় সমরেশ। পরিচিত হওয়ায় কোনও কিছু যাচাই হয়নি। নথি আব্দুলবাবুর কাছে এলে তিনি সব ক্লিয়ার করে দেন। এভাবে ৭৫টি পাসপোর্ট তৈরি  হয়ে যায়।  আব্দুল হাই তদন্তকারীদের জানিয়েছেন ৫২টির ক্লিয়ারেন্স তিনি নিজে দিয়েছেন। বাকিগুলির নথি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি অন্য পুলিস কর্মীদের উপর প্রভাব খাটিয়েছিলেন। এই সমস্ত পুলিস কর্মীদের নাম জেনেছেন তদন্তকারীরা। অভিযুক্ত প্রাক্তন অফিসার নিজেই পুলিসের কাছে স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের যে ভারতীয় পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে, এটা জানতেন তিনি। তারপরেও টাকার লোভে  ষড়যন্ত্রে  সামিল হয়েছিলেন।  এদিকে পাসপোর্টকান্ড নিয়ে সিপি মনোজ ভর্মা বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
  • Link to this news (বর্তমান)