• টানা কুয়াশার দাপটের নেপথ্যে ‘অশান্ত’ সাগর!
    এই সময় | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: আইজিপি — পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে এই শব্দের অর্থ ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ। কিন্তু আবহবিদরা একে ইন্দো–গ্যাঞ্জেটিক প্লেন অর্থাৎ গাঙ্গেয় সমভূমি বলেই জানেন। গত কয়েকদিন ধরে মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীদের আলোচনার মূল বিষয়টাই বিস্তীর্ণ এই সমতলভূমি নিয়ে।

    ইন্দো–গ্যাঞ্জেটিক প্লেন যে রাজ্যগুলো নিয়ে তৈরি, সেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ‘কমন’ একটা সমস্যায় জর্জরিত। সেই সমস্যা কুয়াশার। আইজিপি–র বেশির ভাগ এলাকার উপর গত ৭২ ঘণ্টা ধরে চেপে বসে রয়েছে ঘন কুয়াশার চাদর। কোথাও কোথাও দৃশ্যমানতা নেমে এসেছে শূন্য থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত।

    বিমান বা ট্রেন পরিষেবা তো বিপর্যস্ত হচ্ছেই, এমনকী বাস বা সাধারণ গাড়ি চালানো পর্যন্ত রীতিমতো ঝুঁকির কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কত দিনে অবস্থার উন্নতি ঘটবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

    গাঙ্গেয় সমতলভূমিতে এমন দীর্ঘস্থায়ী কুয়াশার কারণ এবং তার সম্ভাব্য সমাধান — আপাতত আবহবিদদের সবচেয়ে বেশি এই দু’টো প্রশ্নেরই মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝাতে গিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘শীতকালে সূর্য ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটি দ্রুত ঠান্ডা হতে শুরু করে। একই সঙ্গে মাটির সংস্পর্শে থাকা বাতাসের স্তরও ঠান্ডা হয়। তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় নেমে গেলেই বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। ওই জলকণাই কুয়াশা।’

    ইন্দো–গ্যাঞ্জেটিক প্লেনে এমন ভয়াবহ কুয়াশার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবহবিদরা বলছেন, ‘উত্তর–পূর্ব ভারত থেকে যে কনকনে ঠান্ডা বাতাস শীতকালে ভারতে ঢুকতে থাকে, সেই বাতাস অতি দ্রুত মাটিকে ঠান্ডা করে ফেলে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ বাতাস ওই ঠান্ডা মাটির সংস্পর্শে এসে কুয়াশায় পরিণত হয়।’

    আবহবিদরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগর কতটা সক্রিয় থাকছে, তার উপর নির্ভর করে কী পরিমাণ জলীয় বাষ্প দেশের মূল ভূখণ্ডে ঢুকবে। গত কয়েক মাসে সমুদ্র দফায় দফায় অশান্ত হয়েছে। কয়েক দিন আগেও একটি অতি গভীর নিম্নচাপ তামিলনাডু উপকূলে তুমুল বৃষ্টি নামিয়েছে। তার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ পর্যন্ত বৃষ্টি পেয়েছে।

    বিহার, উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি না হলেও জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ বাতাস ছড়িয়ে পড়েছিল গাঙ্গেয় সমতলভূমিতে। অন্য দিকে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাবে আইজিপির পশ্চিমের দুই রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার বাতাসেও প্রচুর জলীয় বাষ্প রয়েছে। ফলে কুয়াশা সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েই রয়েছে।

    আবহবিদদের একাংশ মনে করছেন, বঙ্গোপসাগর যদি এত ঘন ঘন অশান্ত না হতো, তা হলে হয়তো কুয়াশার প্রকোপ কিছুটা কম থাকত। অবশ্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে বায়ুদূষণের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি হওয়ার জন্য দেশের ওই প্রান্তে শীতে ঘন কুয়াশার দাপট প্রতি বছরই চলে। দূষণে লাগাম দিলে পরিস্থিতির কিছুটা সুরাহা হলেও বঙ্গোপসাগর ‘সুস্থ’ না হলে এই সমস্যা চলতেই থাকবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪–এ সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তাই বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প মেশার পরিস্থিতিও তৈরি ছিল।’

  • Link to this news (এই সময়)