• গঙ্গা বুজিয়ে পাঁচিল তুলে বহুতল নির্মাণ, নির্বিকার বালি পুরসভা
    এই সময় | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • সৌমিত্র ঘোষ, বালি

    পুকুর, জলা ছিলই। এ বার গঙ্গা বুজিয়ে নির্মাণের অভিযোগও উঠল। গঙ্গার পাড় থেকে প্রায় দশ ফুট দখল করে নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বালিতে।

    একের পর এক আইন বহির্ভূত বহুতল নির্মাণের অভিযোগে আগেই কাঠগড়ায় উঠেছে বালি পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষকে এলাকার একাধিক বহুতলের বেআইনি অংশ ভাঙার নির্দেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। দু–একটি ক্ষেত্রে পুরসভা ব্যবস্থা নিলেও আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ বালি পুরসভা। এ বার সরাসরি গঙ্গা দখল করে বহুতল নির্মাণের উদ্যোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বালিতে।

    বালির কেদার মুখার্জি লেনের কেদার ঘাটের পাশে রয়েছে একটি বড়সড় বাগান। সেই বাগানের গঙ্গার দিকের সীমানা পাঁচিল ভেঙে নদীর পাড় থেকে বেশ কিছুটা নদীর ভিতর ঢুকে এসে গঙ্গা দখল করে গার্ডওয়াল তোলার অভিযোগ সামনে এসেছে। কিন্তু পুরসভার নাকের ডগায় গঙ্গা বোজানোর অভিযোগ উঠলেও, এখনও পর্যন্ত নির্বিকার পুর কর্তৃপক্ষ। পুর প্রশাসনের নিস্পৃহতায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।

    বালির কেদারঘাটের পাশেই স্থানীয় এক পরিবারের মালিকানাধীন বাগানটি বহুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। চতুর্দিকের পাঁচিল আংশিক ভেঙে পড়েছিল আগেই। বাগানের ভিতরে রয়েছে অন্তত শ–খানেক গাছগাছালি। কিছুটা ঝোপঝাড়ও রয়েছে। সম্প্রতি ওই সম্পত্তিটি হাত বদল হয়েছে। সেখানে বহুতল আবাস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর পরই বাগানের পশ্চিম দিকে কেদার মুখার্জি লেনের দিকে উঁচু টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

    পূর্বদিকে গঙ্গার দিকের পাঁচিলের কিছুটা আগেই জোয়ারের ধাক্কায় ভেঙে পড়েছিল। বাকি পাঁচিল ভেঙে গঙ্গার ভিতর থেকে পাঁচফুট চওড়া গার্ডওয়াল তোলার কাজ চলছে জোর কদমে। যদিও সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনও কর্মরত শ্রমিককে দেখা যায়নি। ওই বাগানের প্রতিবেশী সরস্বতী রায় বলেন, ‘যাদের জায়গা এরা কিনেছে তারা নাকি বলেছে গঙ্গার ভিতর পর্যন্ত তাদের জায়গা। ১৯৭২ সাল থেকে এখানে রয়েছি। এখন কী আর বলব? এদের অনেক ক্ষমতা।’ আর এক প্রতিবেশী সঙ্গীতা মণ্ডল বলেন, ‘এ ভাবে গঙ্গা বুজিয়ে দেওয়া অন্যায়। গাছ কাটবে, গঙ্গা বোজাবে। আমরা কী আর করতে পারি?’

    হাওড়ার মহকুমা শাসক তথা বালি পুরসভার প্রশাসক অমৃতা বর্মন রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ শুনলাম। আমি ইনস্পেকশন করাব। তার পর বলতে পারব ওখানে আইন ভাঙা হয়েছে কিনা।’ বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শুনেছি একটি নির্মাণ হচ্ছে। আমি পুরসভার এগজ়িকিউটিভ অফিসারকে বলেছি বিষয়টি দেখতে। যা রিপোর্ট আসবে সেইমতো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

    বালির আইনজীবী ও তৃণমূল নেতা প্রবীর রায়চৌধুরী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর বার্তা দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। নদী বা জলাজমি যাই বোজানো হোক না কেন তা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। এ ভাবে পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। প্রশাসন অভিযোগ যাচাই করে কঠোর পদক্ষেপ নেবে আশা করি।’

  • Link to this news (এই সময়)