• নাম বনবিভাগ, পিতা রাজ্য সরকার! অস্তিত্ব সঙ্কটে বনবস্তির বাসিন্দারা
    এই সময় | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুজিত রায়, আলিপুরদুয়ার

    নাম বনবিভাগ। বাবার নাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পরিচিতি রীতিমতো চমকে ওঠার মতো, তবে এটাই এই মুহূর্তে বনবস্তির বাসিন্দাদের অভিনব জমির খতিয়ান।

    এমন বিচিত্র পরিচয়পত্র দেখার পরেই উঠে আসছে বিস্তর প্রশ্ন। এই জমি কার? তার মালিকানা কাদের হাতে? বলা হচ্ছে নিজের জমি, অথচ অধিকার কেন নেই? উত্তরের জঙ্গল লাগোয়া বনবস্তির হাজার হাজার বাসিন্দা সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। এই দুর্বোধ্য জমির খতিয়ান ইতিমধ্যে বিলি করা হয়েছে বনবস্তির বাসিন্দাদের কাছে। নামের জমির কাগজ এখন বাক্সবন্দি। বাসিন্দারা নিয়মিত জমি চাষ করে শাক–সবজি, ফসল ঘরে তুলছেন, অথচ জমির মালিকই তাঁরা নন!

    উত্তরবঙ্গে বনবস্তির সংখ্যা ৩০০। শুধুমাত্র বক্সাতেই রয়েছে ৪২টি বনবস্তি। জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। জমির পাট্টা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সরব হয়েছে বনজন শ্রমজীবী মঞ্চ। মঞ্চের আহ্বায়ক লালসিং ভুজেলের দাবি, বনাধিকার আইন ২০০৬ আইন লাগু হয়েছে ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু বনবস্তির বাসিন্দারা জঙ্গলের অধিকার পাননি। সরকার তা বানচাল করে দিয়েছে।

    ভুজেল আরও জানাচ্ছেন, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বনবস্তির ষাট শতাংশ বাসিন্দাকে রাজ্য সরকার এই অভিনব পরিচিতিপত্র তুলে দিয়েছিল। বাসিন্দারাও মনে করেছিলেন নিজের জমি পেলেন। কিন্তু এর মাধ্যমে জঙ্গলের অধিকারকেই খর্ব করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘জঙ্গল কমিউনিটি আমাদের অধীনে থাকবে। তা হয়নি। জঙ্গলের কোনও অধিকার দেওয়া হয়নি। কিন্তু অরণ্যের আধিকার আইনে জঙ্গল তো গ্রামসভার অধীনে থাকার কথা। এ নিয়ে আন্দোলন করেও কোনও ফল হয়নি।’

    বক্সা–র ৪২টি বনবস্তির প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা এখন রয়েছেন নিজভূমে পরবাসী হয়ে! নামেই জমি রয়েছে, আসলে কিছুই নেই! বনাধিকার আইন ঠিক মতো রূপায়িত হয়নি। আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। এই বিষয়ে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট, ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটি কিংবা ইকো ডেভেলপমেন্ট কমিটি গড়ে তোলা হলেও তাদের বার্তাও স্বচ্ছ নয়। ভুজেলের কথায়, ‘১০ কিলোমিটার দূরের মানুষই বনবিভাগের কাছে প্রধান। বনবস্তির বাসিন্দারা তো সেই হিসাবের মধ্যেই নেই!’

    রাজাভাতখাওয়া বনবস্তির বাসিন্দা গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্যের অভিযোগ,বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা সহযোগিতা করছেন না। ১৯৭২ সালের বনাধিকার আইন আঁকড়ে ধরেই চলছে বক্সা ব্যাঘ্র কর্তৃপক্ষ। বরং নতুন করে ২০০৬ সালের যে বনাধিকার আইন তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে মুখে কুলুপ বনবিভাগের। গৌরাঙ্গবাবু জানিয়েছেন, যে সমস্ত খতিয়ান তাঁদের দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ভুমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে।

    আশ্বাস মিলেছে, তা সংশোধন করা হবে। রাজাভাতখাওয়াতে প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা এখনও জমির পাট্টা পাননি। কবে জমির কাগজ দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট করেনি বনবিভাগ। গৌরাঙ্গবাবুর অভিযোগ, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক শ্রেণির আধিকারিকদের জন্য বনবস্তির উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পিএইচই–এর কাজ বন্ধ। পরিশ্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত বনবস্তির বাসিন্দারা।

    বনবস্তি বাসিন্দাদের আজব জমির খতিয়ান নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন। তিনি জানিয়েছেন,বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিস্তীর্ণ এলাকায় উন্নয়ন থেমে নেই। কাজ হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)