• বাণিজ্য সম্মেলনের প্রস্তুতি কত দূর? খতিয়ে দেখতে বুধবার বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
    আনন্দবাজার | ০৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতিপর্ব খতিয়ে দেখে ফেরার পর রাজ্যের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)-এর প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সাগর সফর সেরে কলকাতায় ফিরে বুধবার নবান্নে প্রশাসনিক কর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বৈঠকে বাণিজ্য সম্মেলন ঘিরে রাজ্যের প্রস্তুতির অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করবেন তিনি, এমনটাই প্রশাসন সূত্রে খবর। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ৫-৬ তারিখে রাজ্যে বসবে শিল্প সম্মেলনের আসর। আগামী বছর (পড়ুন ২০২৬) বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এই মঞ্চ থেকে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনা রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বড় সুযোগ পাবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই প্রশাসনিক ভাবে তো বটেই, রাজনৈতিক ভাবেও মমতার কাছে এ বছরের বিজিবিএস যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

    গত কয়েক মাস ধরে এই সম্মেলনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের একাধিক দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই প্রস্তুতি কত দূর এগিয়েছে, এ বার তার বিস্তারিত রিপোর্ট নেবেন মমতা। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ-সহ রাজ্য প্রশাসনের বড় কর্তারা। বিশেষ ভাবে, মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবের কাছ থেকে এই সময়ের মধ্যে গৃহীত বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং প্রস্তুতি সংক্রান্ত কার্যকলাপের তথ্য জানতে চাইবেন। বিজিবিএসের জন্য রাজ্য সরকার নতুন একটি ‘রিটেল’ নীতি তৈরি করছে। এ বিষয়ে গত সপ্তাহে নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং ‘রিটেল’ নীতির খসড়া নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে পেশ করতে পারেন মুখ্যসচিব। মুখ্যমন্ত্রী এই নীতিতে সিলমোহর দিলে রাজ্যে বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচিত হবে।

    বৈঠকে ডাকা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের প্রতিনিধিদেরও। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কাছে জানতে চাইবেন যে, তাঁরা এই বাণিজ্য সম্মেলন উপলক্ষে কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশাপাশি, শিল্পোন্নয়ন ও বিনিয়োগের পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনা কতটা এগিয়েছে, তা-ও পর্যালোচনা করা হবে। শুধু রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নয়, বিজিবিএস দেশের বাণিজ্যক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে একটি আদর্শ বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্য হিসেবে আয়োজিত হয় বলেই দাবি করেছেন এক সরকারি আধিকারিক। তাই এই বৈঠক প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে বড় পরীক্ষা হতে চলেছে।

    গত ২ জানুয়ারি যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীদের জনপরিষেবা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কড়া কথা শুনিয়েছেন, তাতে শিল্প বৈঠকে কোনও গাফিলতি তাঁর চোখে পড়লে যে মমতা ছেড়ে কথা বলবেন না, সে কথা ভালই বোঝেন সরকারি আধিকারিকেরা। তাই মঙ্গলবার প্রশাসনিক মহলে শিল্প বৈঠকের জন্য ব্যস্ততা চরমে। এই বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকে সম্মেলন ঘিরে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে পরিবহণ, পরিকাঠামো, শিল্প, এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের অগ্রগতির জন্য রাজ্য কী ধরনের পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরবে, সে বিষয়ে নীল নকশা দেখতে চাইতে পারেন মমতা। তাই এই বৈঠকে শিল্প সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত সব বিভাগকেই হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, বিদেশি প্রতিনিধিদের আগমন ও তাঁদের আতিথেয়তা সংক্রান্ত প্রস্তুতিও খতিয়ে দেখা হবে।

    অন্য দিকে, বুধবার নবান্নের বৈঠক শেষ হলে কলকাতায় গঙ্গাসাগর মেলার তীর্থযাত্রীদের জন্য তৈরি অস্থায়ী শিবিরগুলি পরিদর্শনে যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে বাবুঘাট-আউট্রাম ঘাট সংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ী শিবির করে তীর্থযাত্রীদের গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথ সুগম করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলত সেই প্রস্তুতিই দেখতে যেতে পারেন তিনি। সঙ্গে আউট্রাম ঘাটে একটি জেটিরও উদ্বোধন করার কথা মমতার।

  • Link to this news (আনন্দবাজার)