নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: এঁরাই ভবিষ্যতের ডাক্তার। অথচ টোকাটুকিতে বাধা পেলেই এই মেধাবী ছাত্ররাই নিমেষে মারমুখী! কোচবিহারের মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় সোমবারের পর মঙ্গলবারও নকলের ঘটনা সামনে আসতেই চোখ কপালে উঠেছে শিক্ষক, অভিভাবক সবার। ব্যাপক টোকাটুকি রুখতে এদিনও দুই পরীক্ষার্থীর খাতা বদলে দেওয়া হয়েছে। কেন এত কড়া ব্যবস্থা, এই অভিযোগে মেডিক্যাল কলেজের দোতলায় যেখানে পরীক্ষা চলছে সেখানকার শৌচাগারে ব্যাপক ভাঙচুরও করা হয়েছে। হবু ডাক্তারদের এমন তাণ্ডব ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
এমজেএন মেডিক্যাল কলেজের শৌচাগারের কমোড, বেসিন ভেঙে ফেলা হয়েছে। নকলে বাধা দেওয়ার কারণেই এই ঘটনা বলে দাবি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের। টোকাটুকি বন্ধে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেই পরীক্ষার্থীদের একাংশ এমনটা করেছে বলে অভিযোগ। যদিও কে বা কারা এমন করেছে তা নির্দিষ্ট করে বলেতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেন সুনির্দিষ্টভাবে নাম জানানো যাচ্ছে না, তা নিয়েও গভীর রহস্য দানা বাঁধছে।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারের পরীক্ষাতেও নকল করার কারণে এক হবু ডাক্তারের খাতা বাতিল এবং চারজনের পরীক্ষার্থীর খাতা বদলে দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্ষোভের জেরেই এই ভাঙচুর ও তাণ্ডব। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ থেকে কোতোয়ালি থানার পুলিসকে জানানো হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, মৌখিক অভিযোগ এসেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ নির্মলকুমার মণ্ডল মঙ্গলবার স্পষ্ট বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় কলেজের শৌচাগারে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয় তারজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গোটা ঘটনার কথাই পুলিসকে মৌখিকভাবে কলেজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। লিখিতভাবেও পুলিসকে পুরো বিষয়টি জানানো হবে। পরীক্ষা হলে কড়া নজরদারি চলছে। কোনও অবস্থাতেই নকল করা যাবে না বলে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারও দুই পরীক্ষার্থী নকল করার কারণে তাদের খাতা বদলে দেওয়া হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা সবে শুরু হয়েছে। সোমবারের পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী নকল করতে উদ্যত হতেই কলেজ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীদের খাতা বদলে দেয়। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় বর্ষের মোট ৯৮ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষা হলে ঢোকার আগে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশে পরীক্ষার হলের লাইভ স্ট্রিমিংও হচ্ছে। দু’জন অবজারভার বাইরে থেকে এসেছেন। চারজন ইনভিজিলেটর রয়েছেন। একজন সেন্টার ইনচার্জ সবটা তদারকি করছেন।
এতকিছুর পরও পরীক্ষায় নকলের চেষ্টা চালাচ্ছেন হবু ডাক্তারদের একাংশ। এসব রুখতে তৎপরতা বাড়াতেই ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে শৌচাগারের উপর। উল্টে দেওয়া হয়েছে চীনামাটির বেসিন, কমোড প্রভৃতি। ভাঙচুর করা হয়েছে শৌচাগারের জিনিসপত্র। কিন্তু তারপরেও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অনড়। পরীক্ষায় নকল রুখতে কড়া নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। কোনওভাবেই এসব বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল। পরীক্ষা হলে এমন পরিস্থিতির কারণে বাকি পরীক্ষার্থীদের মনঃসংযোগ নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ফাইল চিত্র।