দেওয়াল থেকে তেল চুঁইয়ে পড়ার রহস্যের কিনারা হয়নি, উৎস খুঁজে পেলেন না বিশেষজ্ঞরাও
বর্তমান | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: রহস্যের সমাধান এখনও অধরা। গড়িয়ার ফরতাবাদের মজুমদারপাড়ায় একটি বাড়ির দেওয়াল থেকে তৈলাক্ত কোনও পদার্থ চুঁইয়ে পড়ছে বেশ কয়েকদিন ধরে। দেওয়ালের একাংশ রীতিমতো কালো হয়ে গিয়েছে এর ফলে। পদার্থটি আসলে কী এবং এর উৎস কোথায়, তা নিয়ে জনমানসে তুমুল কৌতূহল তৈরি হয়। এই অবস্থায় মঙ্গলবার রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বাড়িতে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে একাধিক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, তৈলাক্ত পদার্থটি আদতে পুড়ে যাওয়া ভোজ্য তেল। কিন্তু এর উৎস কোথায় বা এভাবে দেওয়াল চুঁইয়ে পড়ছে কেন—তার এখনও কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে উৎসুক জনতা সকাল-বিকেল ভিড় জমাচ্ছে মজুমদারপাড়ার ওই বাড়িতে। বাড়িটির ছবি ও ডিভিও তোলার ধুম পড়ে গিয়েছে। ওএনজিসির প্রাক্তন কর্মী রতন সরকারের বাড়ি এটি। মঙ্গলবার সেখানে গিয়েছিল রাজপুর সোনারপুর পুরসভার প্রতিনিধি দলও। তারাও কিছু জানাতে পারেনি। সব মিলিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ঘোষ বলেন, ‘পদার্থটি আসলে পুড়ে যাওয়া ভোজ্য তেলের অবশিষ্টাংশ। এর উৎস জানা খুব দরকার। তবে বিপদের কোনও আশঙ্কা নেই। মাটি খুঁড়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোনও রহস্য লুকিয়ে রয়েছে কি না।’ পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাসের বক্তব্য, ‘বাড়ির যে অংশে তেল বেশি পড়ছে, তার সামনে ট্রায়াল পিট (গর্ত) করে দেখা হবে, কিছু রয়েছে কি না।’
চুঁইয়ে পড়া তেলের কিছুটা নমুনা সংগ্রহ করে তুহিনবাবু তা একটি খবরের কাগজে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। দেখা যায়, কাগজ পুড়ে গেলেও তেলে আগুন ধরেনি। তুহিনবাবু বলেন, ‘এটা পোড়া তেল বলেই আগুন ধরছে না।’
পুরসভার চেয়ারম্যান, সিআইসি নজরুল আলি মণ্ডল সহ ইঞ্জিনিয়াররা ওই বাড়িতে গিয়ে রান্নাঘর, চিমনির অবস্থান, ড্রেনে কোনও আবর্জনা আছে কি না, খতিয়ে দেখেন। কিন্তু তাঁরা কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা পাননি। যাদবপুরের কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক দেবজ্যোতি ঘোষাল জানান, যে জমিতে বাড়িটি তৈরি হয়েছে, সেখানে আগে কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ড ছিল না বলেই তাঁকে পরিবারের লোকজন বলেছেন। ফলে বিশেষজ্ঞদের ধন্দ আরও বেড়েছে। তাই আপাতত বাড়ির সামনে গর্ত করে তেলের উৎস জানার চেষ্টা করবে পুরসভা। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এবং ওএনজিসি-কে সরকারিভাবে বিষয়টি নিয়ে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান পুর-চেয়ারম্যান।