• ‘দূরের গুদামে’ শস্য পাঠিয়ে ১৫ কোটি ক্ষতি! বিতর্কে এফসিআই
    এই সময় | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • বঙ্গে রেশন‍ দুর্নীতি নিয়ে যখন রাজনীতির আঙিনা তোলপাড়, তখন খাস কেন্দ্রীয় সরকারি এজেন্সি ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই)–এর আঞ্চলিক জেনারেল ম্যানেজারের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। দিল্লিতে এফসিআই–এর চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে পাঠানো ‘হুইসলব্লোয়ার’–এর একটি চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গে এই আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

    সেখানে বঙ্গের রিজিওনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ফিনান্স)–এর দাবি, জিএম ইচ্ছাকৃত ভাবে এ রাজ্যে এফসিআই–এর শস্য সড়কপথে পরিবহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ করেছেন, যার জেরে কেন্দ্রের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা। একটি স্পেশাল অডিট চেয়ে এফসিআই–এর কেন্দ্রীয় দপ্তরের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ডিজিএম লিখেছেন, কেন্দ্রীয় সংস্থা মনে করলে এই আর্থিক অনিয়মের শিকড়ে পৌঁছতে সিবিআইয়ের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।

    ঠিক কী অভিযোগ?

    গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এফসিআই–এর সিএমডি, ইস্ট জ়োনের এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর, ভিজিল্যান্স–সহ শীর্ষ কর্তাদের পাঠানো অভিযোগপত্রে বঙ্গের রিজিওনাল অফিসের ডিজিএম (ফিনান্স) নিকেশ তিওয়ারির অভিযোগ, ২০২৩–এর অগস্ট থেকে ২০২৪–এর ফেব্রুয়ারি সময়কালে ওপেন মার্কেট সেল স্কিমে (ওএমএসএস) শস্য বিক্রি করতে গিয়ে পরিবহণ ও শ্রম খাতে নিয়মবহির্ভূত ভাবে অতিরিক্ত অন্তত ১৪.৬২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

    যে গুদামে হাজার হাজার মেট্রিক টন শস্য মজুত রেখে সেখান থেকে বিক্রি করা উচিত ছিল, সেই ‘লো কস্ট সেন্টার’ না–বেছে, তার থেকে অনেক দূরের গুদামে (হাই কস্ট সেন্টার) সেই শস্য নিজেদের খরচে পাঠিয়ে তার পরে তা বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিকেশের দাবি, গোটা অনিয়মই হয়েছে জিএম রাজেশ গুলিয়ার অঙ্গুলিহেলনে। আর্থিক অনিয়মের উল্লেখ করে এবং স্পেশাল অডিটের আর্জি জানিয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জিএম গুলিয়াকে চিঠি দেওয়া হল‍েও তিনি এখনও এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ।

    পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এফসিআই–এর গুদামের স্টক ও সেখানে শস্য পাঠানোর খরচের উল্লেখ করে ডিজিএম (ফিনান্স)–এর দাবি, প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১৮ কোটি নয়ছয়ের সম্ভাবনার উল্লেখ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর কাছে চিঠি এসেছিল বঙ্গের ডিজিএম (কমার্শিয়াল)–এর তরফে। সেই অভিযোগ পর্যবেক্ষণের পরে তিনি কমপক্ষে ১৪.৬২ কোটি অযাচিত অতিরিক্ত খরচের উল্লেখ করেছেন।

    কী ভাবে হয়েছে আর্থিক নয়ছয়?

    এফসিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, রেশনে খাদ্য সরবরাহের বাইরেও কয়েক মাস অন্তর বিভিন্ন রাজ্যে উৎপাদিত অতিরিক্ত শস্য কেন্দ্রীয় সংস্থাটি টেন্ডার ডেকে খোলা বাজারের বেসরকারি পাইকারদের বিক্রি করে। সেটাই ওপেন মার্কেট সেল স্কিম। সেখানে টেন্ডার পাওয়া ব্যবসায়ী এফসিআই–এর গুদাম থেকে বাজারদরের তুলনায় বেশ কিছুটা কম দামে শস্য কেনেন।

    এফসিআই চেষ্টা করে, রেকে চাপিয়ে আনা এই শস্য যতটা কম পরিবহণ খরচে কাছাকাছি এলাকায় নিজেদের ফুড স্টোরেজ ডিপো (এফএসডি)–য় অথবা সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশন (সিডব্লিউসি)–এর ডিপোয় পৌঁছে দিতে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীদের শস্য নেওয়ার কথা।

    পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, একটা দীর্ঘ সময়ে (২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে) রেলপথে আসা শস্য (এক্ষেত্রে গম) রেক থেকে নামানোর পরে তা নিকটবর্তী ডিপো থেকে ব্যবসায়ীদের সরবরাহ না–করে অনেক দূরের ডিপো বা ওয়্যারহাউসে সড়কপথে পাঠানো হয়েছে, যার ফলে মোটা অঙ্কের পরিবহণ খরচ ও লেবার চার্জ গুনতে হয়েছে এফসিআইকে।

    মালদার উদাহরণ দিয়ে লেখা হয়েছে, সেখানে মঙ্গলবাড়িতে এফসিআই–এর নিজস্ব ডিপোয় সরাসরি রেক থেকে মাল নামে। সেই ডিপো থেকে শস্য দেওয়ার পরিবর্তে নিজেদের খরচে ৭২ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জের ডিপোয় মাল পৌঁছে সেখান থেকে ব্যবসায়ীদের তা সরবরাহ করা হয়েছে। অভিযোগ, টেন্ডার পাওয়া ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে, এক শ্রেণির পরিবহণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোজসাজশে এই নয়ছয় করা হয়েছে।

    নিকেশের দাবি, বিষয়টি এফসিআই–এর জ়োনাল অফিসে জানানোর পরেও জিএম গুলিয়ার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। সেই কারণেই সংস্থার কেন্দ্রীয় দপ্তরকে সব তথ্য পাঠিয়েছেন তিনি। এই সময়–এর তরফে ফোন করা হলে যদিও নিকেশ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

    অভিযোগের আঙুল যাঁর দিকে, এফসিআই–এর পশ্চিমবঙ্গ রিজিওনাল অফিসের সেই জিএম রাজেশ গুলিয়া রবিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক ভাবে দাবি করেন‍, এফসিআই–এর সুনাম নষ্ট করতে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে সোমবার তিনি মন্তব্য করবেন। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ফোন ও মেসেজে বহুবার যোগাযোগের পরেও তিনি ব্যস্ততার উল্লেখ করে অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি।

  • Link to this news (এই সময়)