• বালুর চিঠিই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি! কোর্টের তোপে ইডি
    এই সময় | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: রেশন দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুর যে চিঠি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল, তা বাজেয়াপ্তই করেনি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মঙ্গলবার আদালতে এ নিয়ে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলো এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ দিন বিচারভবনে ইডির বিশেষ আদালতের বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় সামগ্রিক তদন্ত–প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।

    খানিকটা বিস্মিত হয়েই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘যে চিঠি এত গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনারা দাবি করছেন, সেটাই বাজেয়াপ্ত করেননি!’ এর প্রেক্ষিতে ইডি দাবি করে, তারা ‘সুপারম্যান’ নয়। পাল্টা বিচারক বলেন, ‘সুপারম্যান হতে বলছি না। আপনারা যুক্তিবাদী হোন।’

    রেশন দুর্নীতির তদন্তে ধৃত আনিসুর রহমান এবং আলিফ নুরের বিরুদ্ধে সওয়াল করতে গিয়ে একাধিকবার জ্যোতিপ্রিয়র চিঠির উল্লেখ করেছে ইডি। মঙ্গলবারও বালু–সহ অন্য ধৃতদের জামিনের শুনানিতে ইডি একই কথা বললে বিচারক তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘আপনাদের গোটা মামলা এমন একটি নথির উপরে নির্ভর করে রয়েছে, যা কি না বাজেয়াপ্তই করা হয়নি।’

    বিচারকের প্রশ্ন, ‘তা হলে চিঠি এল কোথা থেকে? শুধু মুখে বললেই হবে? উনি যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন কাস্টডি কাদের ছিল? আদালতের নির্দেশে হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হয়েছিল। সেই সময়ে চিঠি পাওয়া গেলে তা তো আদালতে হস্তান্তর করা উচিত ছিল।’

    ২০২৩–এর ২৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারির পরে অসুস্থ হয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বালু। সেই সময়ে ইডি একটি চিরকুট পায়। দাবি ছিল, হাসপাতাল থেকে মেয়েকে সেটি লিখেছিলেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। তাতে টাকার লেনদেন সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ছিল বলে দাবি করে ইডি। সেই চিঠি ইডি কী করে পেল, সে প্রশ্নও তোলেন বিচারক। কারণ ইডি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, সেই চিঠি গিয়েছিল তদন্তকারী অফিসারের (আইও) কাছে।

    এই প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বিচারক— ‘চিঠি আইও–কে দেওয়া হলো কী ভাবে? কোর্টের অনুমতি ছাড়া তো তাঁর সেখানে যাওয়ার কথাই নয়! তিনি অ্যাকসেস পেলেন কী ভাবে? আপনারা তো সরাসরি সেই চিঠি বাজেয়াপ্ত করেছেন।’ সেই সময়ে বালুর সঙ্গে যাঁরা দেখা করেছিলেন, তার লগবুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কি না, এ প্রসঙ্গে তা–ও জানতে চায় আদালত। জবাবে ইডির তরফে যুক্তিতে বলা হয়, ‘ওই চিঠি হলো পরিস্থিতির আউটকাম, একটি ঘটনার বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। চিঠিতে জ্যোতিপ্রিয় সব কিছু না লিখলেও দুর্নীতি ও টাকার কথা বলা রয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণও রয়েছে।’

    আদালতের বক্তব্য, এই মামলায় দায়ের হওয়া বিভিন্ন এফআইআর–এ বড়সড় কোনও দুর্নীতির ইঙ্গিত নেই। বিচারকের প্রশ্ন, ‘তা হলে তদন্তকারী সংস্থা কী ভাবে বলছে এই দুর্নীতির জন্য রেশনে শর্ট সাপ্লাই হয়েছে? উপভোক্তাদের উপর তার কোনও প্রতিফলন ঘটেনি। কেউ অনাহারে মারা গিয়েছেন, এমন কোনও অভিযোগও আসেনি।’

    ইডির দাবি, এফআইআর–এর পরে তারা তল্লাশি চালিয়ে সব তথ্য পেয়েছে। এতে কোর্টের প্রশ্ন, ‘গরমিল পেয়ে সঠিক জায়গায় অভিযোগ জানানো হয়নি কেন?’ যে মেরুন ডায়েরির প্রসঙ্গ ইডি তুলেছিল, তার হাতের লেখা কোনও বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তোলে আদালত। কোর্টের মন্তব্য, ‘আপনাদের পুরো মামলাটাই তো আনসিজ়ড ডকুমেন্টের উপরে দাঁড়িয়ে।’

    এ প্রসঙ্গেই ইডির আইনজীবী বলেন, ‘আমরা সুপারম্যান নই।’ পাল্টা বিচারক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘তা হলে হতে চাইছেন কেন? সুপারম্যান নয়, আপমাদের যুক্তিবাদী হতে বলছি।’

  • Link to this news (এই সময়)