• লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায়..., বেওয়ারিশ ৪৫, ফ্রিজার ১৬
    এই সময় | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • রাহুল মজুমদার ■ শিলিগুড়ি

    পুলিশের ঢিলেমি এবং চাহিদার তুলনায় ফ্রিজ়ারের স্বল্পতা। এর ফলে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে জমছে বেওয়ারিশ লাশের পাহাড়। দাবিদারহীন দেহের ঠাঁই করে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

    মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, ৪৫টি বেওয়ারিশ দেহ রয়েছে সেখানে। মাত্র ১৬টি ফ্রিজ়ার কাজ করছে। বাকি ৩২টি ফ্রিজ়ার খারাপ। এত সংখ্যক দেহ কোথায় রাখা হবে, তা ঠিক করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। প্রতি মাসে অন্তত ২০টি করে দাবিদারহীন দেহ আসছে মেডিক্যালে। তাই মর্গের মেঝেতেই ডাঁই করে রাখা হচ্ছে একের পর এক দেহ। মেডিক্যাল কলেজের পাশেই রয়েছে কাওয়াখালি গ্রাম। মর্গ থেকে কাটা হাত-পা নিয়ে মাঝেমধ্যে কুকুর চলে আসে গ্রামে। এ ছাড়াও জনবসতিতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ সব কারও অজানা নয়, কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি।

    এখন যে দাবিদারহীন দেহের সংখ্যা ৪৫, মাসখানেক আগে এই সংখ্যাটা ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই ৪৫টি দেহের বেশিরভাগই মাটিগাড়া থানার আওতাধীন। শিলিগুড়ি থানা এবং জিআরপি থেকে পাঠানো দাবিদারহীন দেহ পড়ে রয়েছে। এই মৃতদেহগুলি সৎকার করতে হলে পুলিশকে সাব ডিভিশনাল এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হয়। মহকুমা শাসকের দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট থানা অনুমতি নিয়ে এলে দেহ সৎকার করা যায়।

    কিন্তু পুলিশের ঢিলেমির জন্য দেহগুলি পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন হয় যে মেডিক্যাল কলেজ থেকে পুলিশকে চিঠি দিয়ে দেহ সৎকারের অনুরোধ করতে হয়। এরপরেও ঠিকঠাক কাজ হয় না বলে দাবি মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের।

    উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান রাজীব প্রসাদের বক্তব্য,  ‘৩২টি খারাপ ফ্রিজ়ার ঠিক করার দায়িত্ব পূর্ত দপ্তরের হাতে। এখনও কেন কাজ হচ্ছে না জানি না। এগুলো ঠিক হলে সমস্যা কিছুটা কমবে। জেলাশাসক, স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তারা সমস্যার কথা জানেন। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশেরও ঢিলেমি রয়েছে। হয়তো তাঁরা কাজের চাপে এ দিকটা সামলাতে পারেন না।’ শিলিগুড়ির মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের বক্তব্য, ‘আগে আরও অনেক দেহ ছিল। এখন নিয়ম করে সেগুলি সময়ে ডিসপোজ় করা হচ্ছে।’

    মেডিক্যালের ফরেন্সিক বিভাগ সূত্রে খবর, প্রতি মাসে অন্তত ২০টি করে দাবিদারহীন দেহ আসে এখানে। তাই মাসে অন্তত ২০টি করে দেহ সৎকার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। ২০টি দেহ সৎকার করতে হলে কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হবে। মাসে ২০টি দেহ সৎকার করা যেতে পারে। কিন্তু নিয়মিত দেহ সৎকার না করায় লাশের পাহাড় জমছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল পঞ্চায়েত এলাকায় হওয়ায় শিলিগুড়ি পুরনিগম দেহ সৎকারের কাজ করতে পারছে না।

    আবার পঞ্চায়েতের কাছে পরিকাঠামো এবং তহবিল না থাকায়, তাদের পক্ষে সেই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে চালাতে শিলিগুড়ি মেয়র ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেবের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। গৌতমের বক্তব্য,  ‘ফ্রিজারগুলি ঠিক করার কথা আগেই হয়েছিল। অর্থ বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। সিভিলের কাজ দু’-একদিনের মধ্যে হয়ে যাবে।’

  • Link to this news (এই সময়)